বাংলাদেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে মব সন্ত্রাস (Mob Violence)। উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ডয়চে ভেলে (Deutsche Welle)’র এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পুলিশের ওপর ধারাবাহিক হামলা, আসামি ছিনতাই, গণপিটুনিসহ উদ্বেগজনক চিত্র।
শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ড ঘিরে সহিংসতা
১৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদল (Chhatra Dal) কর্মী শাহারিয়ার সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে তামিম হাওলাদার, পলাশ সরদার ও সম্রাট মল্লিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু এর জেরে মাদারীপুর জেলার ব্রাহ্মন্দীতে তামিমের বাড়িতে আগুন দেয় একদল মানুষ।
তামিম আদালতে জানান, তিনি নির্দোষ এবং ঘটনাস্থলে ছিলেন না। অথচ তার পরিবার এখন বাস্তুচ্যুত।
মবের হামলায় পুলিশও আক্রান্ত
বাংলাদেশ পুলিশ (Bangladesh Police)’র মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম (Baharul Alam) জানান, শুধুমাত্র এপ্রিলে পুলিশের বিরুদ্ধে ৩৭টি মব হামলা হয়েছে। মার্চে এর সংখ্যা ছিল ৩৫টি। অনেক ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তারের পর মব গঠন করে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতার চিত্র
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) (HRSS) জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ১১৯ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। গত দশ বছরে সংখ্যাটি ৭৯২ জনে পৌঁছেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরবর্তী সময়ে এই প্রবণতা বেড়েছে।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও বিচারহীনতার অভিযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৌহিদুল হক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (National Human Rights Commission) সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক (Kazi Reazul Hoque) মনে করেন, রাজনৈতিক আশ্রয় ও পুলিশের দুর্বলতা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। অপরাধীদের রক্ষার সংস্কৃতি তৈরির সুযোগ যেন তৈরি না হয়, সেজন্য পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।
নাটকীয় কিছু ঘটনা
- বগুড়ায় এনসিপি নেতাকর্মীরা অধ্যাপক এস এম মিল্লাত হোসেনকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে।
- অভিনেতা সিদ্দিক (Siddiq) গণপিটুনির শিকার হন এবং রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে থানায় নেওয়া হয়।
মব-ভয়ে গণমাধ্যমে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ (Kamal Ahmed) জানান, মবের হুমকির কারণে অনেক গণমাধ্যম সংস্থা এখন ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’-এর মধ্যে পড়েছে।
সরকারের অবস্থান
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সহকারী সচিব ফয়েজ আহমেদ (Foyez Ahmed) বলেন, মব তৈরির পেছনে আগের সরকারের দমননীতির প্রতিক্রিয়াও কাজ করছে। সরকার ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় ৬০-৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে স্বীকার করেন, পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।