আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নররা তদন্তের মুখে

পতিত আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) পরিচালনায় ব্যাপক লুটপাট, অর্থপাচার ও অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। এসবের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সেই সময় নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নর এবং ডেপুটি গভর্নররা। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

গভর্নরদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনজন গভর্নর এবং ১৩ জন ডেপুটি গভর্নর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে এখনো বহাল রয়েছেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার (Nurun Nahar) ও হাবিবুর রহমান (Habibur Rahman)।

আওয়ামী আমলে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন গভর্নর হলেন: ড. আতিউর রহমান (Atiur Rahman), ফজলে কবির (Fazle Kabir) এবং আব্দুর রউফ তালুকদার (Abdur Rouf Talukder)। দায়িত্ব পালনের সময় তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ঋণ নীতিতে শৈথিল্য এবং প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রিজার্ভ চুরির দায়ে বিতাড়িত আতিউর

২০০৯ সালে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ (Salehuddin Ahmed)’র স্থলাভিষিক্ত হয়ে গভর্নরের দায়িত্ব নেন আতিউর রহমান। তার সময়েই ঘটে রিজার্ভ চুরির ন্যক্কারজনক ঘটনা। ওই ঘটনায় আতিউরের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন এবং ধামাচাপার অভিযোগে তিনি পদত্যাগ করেন এবং সরকার পতনের পর দেশ ত্যাগ করেন। তার পাসপোর্ট বর্তমানে ব্লক করা রয়েছে।

গভীর রাতে অনুমোদন, ব্যাংক দখল ও লুটপাট

আতিউরের পরে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবির। তার সময়ে এস আলম গ্রুপ (S Alam Group) দখলে নেয় ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংকে লুটপাটের অভিযোগ উঠলেও তিনি তদারকি কমিয়ে দেন এবং সুদের হার ৯ শতাংশে স্থির রেখে খেলাপি ঋণ গোপন রাখার সুযোগ দেন।

রউফ তালুকদারের আমলেও অনিয়মের ধারাবাহিকতা

২০২২ সালের জুলাইয়ে গভর্নর পদে আসেন আব্দুর রউফ তালুকদার। তার আমলে বেনামে ঋণ বিতরণ, ঋণ খেলাপিদের ছাড় এবং টাকা ছাপিয়ে এস আলম গ্রুপকে বিতরণের অভিযোগ রয়েছে। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

ডেপুটি গভর্নরদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ

সাড়ে ১৫ বছরে দায়িত্বে থাকা ১৩ জন ডেপুটি গভর্নরের মধ্যে অনেকেই জালিয়াতি, অনিয়ম ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে এসকে সুর চৌধুরী (SK Sur Chowdhury) ও মাসুদ বিশ্বাস (Masud Biswas) বর্তমানে দুদক (ACC) এর মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন।

অন্যদের মধ্যে কাজী ছাইদুর রহমান (Kazi Saidur Rahman) ডলার বাজারে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে, আর আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাছের (Abu Farah Mohammad Nasser) ঋণ নীতিমালা শিথিল করে গোটা ব্যাংক খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলেন।

তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা

বর্তমান সরকার এইসব গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিএফআইইউ (BFIU) ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান নিশ্চিত করেছেন, সরকারের নির্দেশনায় একটি তালিকা তৈরি করে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।