আড়াই মাস আগে আত্মপ্রকাশ করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party – NCP) এখনো দৃশ্যমান গতিশীলতা অর্জন করতে পারেনি। ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা দলটি সাংগঠনিক দুর্বলতা, আদর্শগত বিভাজন ও নেতৃত্বের সমন্বয়হীনতায় পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কাঠামোর দুর্বলতা
দলের ২১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি থাকলেও জেলা-উপজেলা কমিটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। যদিও এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই তৃণমূলের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করা হবে এবং নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে কাজ চলছে।
আখতার হোসেন বলেন, “আমরা দেশকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ করছি।” তবে বাস্তবতা বলছে, বড় নেতা অনেক, কিন্তু সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয়তা সীমিত।
আদর্শিক বিভাজন ও বলয়ের রাজনীতি
দলটি মূলত বিভিন্ন মতাদর্শ থেকে আসা তরুণদের নিয়ে গঠিত—ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্রচিন্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইত্যাদি সংগঠনের নেতাদের মিলনমঞ্চ এনসিপি। ফলে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মতপার্থক্য প্রকট হয়ে উঠছে।
এ বিষয়ে চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, “এনসিপির তরুণদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিরোধ দেখা যাচ্ছে, যা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার জন্য ক্ষতিকর।”
ফেসবুক কেন্দ্রিক বিতর্ক ও মতপার্থক্য
দলীয় নেতাদের ফেসবুক পোস্ট ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যেমন, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম-এর পোস্ট, এলজিবিটিকিউ নিয়ে সারজিস আলম-এর মন্তব্য, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান-এর সঙ্গে বৈঠক সংক্রান্ত হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের পরস্পরবিরোধী পোস্ট—সব মিলিয়ে দলীয় ঐক্যে ফাটল ধরছে।
রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্টকরণ
সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ‘সাত বিষয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি’ ব্যাখ্যা করেন। এর মধ্যে রয়েছে—মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় সহাবস্থান, সম্প্রীতি, হিন্দু-মুসলমান-দলিত-নারীর মর্যাদা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা, নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার লক্ষ্য এবং রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি।
অতীতের প্রেক্ষাপট ও বর্তমান বিভাজন
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে, ডাকসু নির্বাচন, গণ অধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, আম-জনতার দল, আপ বাংলাদেশ, জুলাই মঞ্চ—এসব ধাপে ধাপে বিভক্তি এবং পুনরায় সংগঠনের চিত্র এনসিপিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে।
দলটির কিছু সাবেক সদস্য যেমন আলী আহসান জুনায়েদ বেরিয়ে গিয়ে আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। এসব বিভাজন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনসিপির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছে।