রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ সহায়তার জন্য ‘মানবিক করিডর’ বা ‘চ্যানেল’ ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকারের ব্যাখ্যা দিলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় কাটেনি।
বুধবার (২১ মে) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান (Khalilur Rahman) জানান, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক করিডর’ নয়, বরং জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ত্রাণ সহায়তার একটি ‘চ্যানেল বা পাথওয়ে’ বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে, এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)সহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, চ্যানেল ও করিডরের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনো পার্থক্য নেই এবং সরকারের বক্তব্যে কেবল ‘শব্দের মারপ্যাঁচ’ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর মতপার্থক্য
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (General Waker-Uz-Zaman) বলেন, মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত অবশ্যই একটি নির্বাচিত সরকার থেকে আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণেই হতে হবে।
বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রতিক্রিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed) বলেন, “বাংলাদেশকে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের মুখোমুখি করা হচ্ছে।”
বিএনপি মনে করে, সীমান্ত ব্যবহার করে রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছালে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের (Abdullah Muhammad Taher) জানান, সরকারের ব্যাখ্যা তাদের কাছে স্পষ্ট নয় এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সীমান্ত ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অনুচিত।
এনসিপি ও বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party) এবং বামপন্থী দলগুলোর নেতারাও সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন (Akhtar Hossain) বলেন, বিষয়টির প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা থাকা উচিত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মত
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান (ANM Muniruzzaman) বলেন, “সরকারের বক্তব্য অস্বচ্ছ এবং সীমান্ত ব্যবহারে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে।”
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরও বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট না হলে বিতর্ক বাড়তেই থাকবে।
ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্লেষকেরা বলেন, রাখাইনে ত্রাণ সহায়তার জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার করলে চীন (China) ও ভারত (India) বিষয়টিকে কীভাবে নেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বললেও যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, তবে রাজনৈতিক মহলে এ বিষয়ে আস্থা দেখা যাচ্ছে না।
বিতর্কের সূচনা
২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। রাখাইন এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। জাতিসংঘ ২০২3 সালের এক প্রতিবেদনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জানিয়েছিল। এরপর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস মার্চে বাংলাদেশ সফরে এসে ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এরপর ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন (Towhid Hossain) বলেন, সরকার ‘নীতিগতভাবে’ মানবিক প্যাসেজে সম্মত।
উপসংহার
রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, সরকারের বক্তব্য এখনো অস্পষ্ট এবং কোনো জাতীয় ঐকমত্য ছাড়াই এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। একমাত্র একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকারই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।