উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ক্ষোভে অভিমানে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

চতুর্মুখী চাপ ও অভিমানের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অন্যান্য সদস্যদের অনুরোধে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ক্ষোভ

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শুরুতেই সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “আমি তো প্রধান উপদেষ্টা হতে চাইনি। রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আমাকে সংস্কারের ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে, শো-পিস হয়ে থাকার জন্য না। কাজ করতে না পারলে আমি চলে যাবো।”

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ (Awami League) নিষিদ্ধকরণ, চট্টগ্রাম বন্দরের (Chattogram Port) সক্ষমতা বৃদ্ধি, জুলাই স্মারক, মানবিক করিডর, এবং এনবিআর পৃথকীকরণসহ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে বিভিন্ন পক্ষ বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “আমার তো অযথা পদে বসে থাকার প্রয়োজন নেই!”

উপদেষ্টাদের প্রতিক্রিয়া ও অনুরোধ

ড. ইউনূসের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এক উপদেষ্টা বলেন, “পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। আমরা পরিপূর্ণ ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছি।” আরেকজন বলেন, “এগুলো ফ্যাসিবাদীদের ষড়যন্ত্র।” তৃতীয় একজন মন্তব্য করেন, “দুই হাজার তরুণের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এ সরকার গঠিত হয়েছে। আমরা ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে।”

এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা কিছুটা শান্ত হন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার প্রস্তাব দেন। উপদেষ্টারা এতে সম্মতি জানালেও এজন্য আরও কিছু সময় নেওয়ার পরামর্শ দেন। বৈঠক শেষ হলেও সাংবাদিকদের কোনও ব্রিফিং দেওয়া হয়নি। যোগাযোগ করা হলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam) মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

অতীতেও পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ

এর আগেও গত বছরের ৩১ জুলাই ড. ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণার উদ্যোগে সরকার বিব্রত হয়। এরপর ৩০ ডিসেম্বর ছাত্র উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, “তোমরাই আমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছ, এখন পাশ কাটিয়ে যদি ঘোষণা দাও, তবে আমাদের ক্ষমতায় থাকার যৌক্তিকতা কোথায়!”

তবে পরে ছাত্ররা ঘোষণা থেকে সরে আসে এবং সরকার এক মাসের মধ্যে প্রোক্লেমেশন ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরও দাবির মুখে আন্দোলন হয়, যার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং আইনী সংস্কার এনে দলটির বিচারিক কাঠামো নির্ধারণ করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (Ehsanul Mahbub Zubayer) বিষয়টি পর্যবেক্ষণের কথা জানান।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (National Citizen Party (NCP)) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার (Sarwar Tushar) বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার ওপর ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে। তার প্রতি দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তবে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”