দেশ এক সংকটময় মোড়ে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) পদত্যাগের চিন্তা করছেন এবং শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক ও পদত্যাগের ইঙ্গিত
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত সভা শেষে চার ঘণ্টার একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ড. ইউনূস তার পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ওই বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি বলেন, “যেনতেন নির্বাচন করে আমি দায় নিতে চাই না। কাজের পরিবেশ না থাকলে পদে থাকার যৌক্তিকতা নেই।”
রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ও উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি
বিএনপি (BNP) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party (NCP)) একে অপরের ঘনিষ্ঠ ছয়জন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। বিএনপি খলিলুর রহমান, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া-এর পদত্যাগ দাবি করেছে। এনসিপি চায় ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. সালেহউদ্দিন-এর পদত্যাগ।
সেনাপ্রধানের বিতর্কিত বক্তব্য
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (General Waqar Uz Zaman) গত বুধবার সেনানিবাসে তার বক্তব্যে নির্বাচনের সময়সীমা, করিডোর ও বন্দরের বিষয়ে মত দেন। তিনি জানান, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই। তার বক্তব্য সরকারকে চাপে ফেলেছে, এবং সামাজিক মাধ্যমে তা বিভিন্নভাবে প্রচার পেয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমও এ বক্তব্য নিয়ে উসকানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ও জামায়াতের বিবৃতি
জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) আমির ডা. শফিকুর রহমান জাতীয় স্বার্থে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম অভ্যুত্থান-পন্থী দলগুলোর বিভেদ দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন।
খেলাফত মজলিস মনে করে, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে বিভেদ পতিত স্বৈরাচারকে লাভবান করবে।
ভারতের মিডিয়ায় উসকানি
ভারতের আনন্দবাজার এবং দ্য উইক সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা পর্যন্ত তুলে ধরেছে। ইকোনমিক টাইমস ও ইন্ডিয়া টুডে সেনাপ্রধান ও সরকারের মধ্যকার উত্তেজনার কথা তুলে ধরেছে।
বিশ্লেষকদের মন্তব্য
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এম মনিরুজ্জামান সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে জাতীয় স্বার্থে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান বলেন, “সেনাপ্রধানের বক্তব্য সেনা বিধির লঙ্ঘন এবং এটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।”
জুলাই বিপ্লবীদের আশ্বাস
জুলাই বিপ্লবের নেতা ও এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে তাকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় সময় নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের সব শক্তি আপনার সঙ্গে রয়েছে।” এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন জানান, প্রধান উপদেষ্টা কাজ করতে চান, তবে পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন।