সেনাপ্রধানকে সরানোর গুজবেই উত্তপ্ত ক্যান্টনমেন্ট: জিয়া হাসানের বিশ্লেষণ

২২ মে রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী নিয়ে ফেসবুকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক জিয়া হাসান (Zia Hasan)। তিনি জানান, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (General Waqar Uz Zaman)–কে সরিয়ে পিএসও ওয়ান জেনারেল কামরুল–কে নিয়োগের পরিকল্পনা থেকেই সেনাবাহিনীর ভেতরে মারাত্মক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে সেনা ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয় এবং সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থানে চলে যায়।

“মানবিক করিডোর মূল ইস্যু নয়”

জিয়া হাসান মনে করেন, সাম্প্রতিক সেনা প্রধানের দরবারে দেয়া বক্তব্যে মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধ একটি “সাইড শো” মাত্র। মূল ঘটনা ছিল, সেনা প্রধানকে সরিয়ে দেওয়ার একটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ, যার গুজব রাতারাতি সেনাবাহিনীতে আলোড়ন তোলে। ওই দিন ইন্টারনেট ৪০ মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং সেনানিবাসে সামরিক যান চলাচল বাড়ে।

খলিলুর রহমান ও কামরুল ইস্যু

বিষয়টির সূচনা হয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান (Dr. Khalilur Rahman)–এর নিয়োগ থেকে। তাঁর সঙ্গে পিএসও ওয়ান জেনারেল কামরুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)–এর আস্থা অর্জন সেনাবাহিনীর উচ্চ মহলে সন্দেহ ও আশঙ্কার জন্ম দেয়।

জিয়া বলেন, “আর্মি এই সম্পর্ককে জেনারেল ওয়াকারের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেছে এবং কামরুলকে এএফডি থেকে সরানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর তা কার্যকর করেনি।”

“টার্মিনেশন নোট” এবং অভ্যুত্থানের আশঙ্কা

ঘটনার চূড়ান্ত রূপ নেয় যেদিন গুজব ছড়ায় যে, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে জেনারেল ওয়াকারকে সরানোর জন্য নোট পাঠানো হয়েছে। এই গুজবে সেনাপ্রধান তার স্টাফদের কাছ থেকে বিদায় নেন বলে শোনা যায় এবং ক্যান্টনমেন্টে সেনা ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, সেনা যান চলাচল বাড়ে এবং সরকারের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

আন্তর্জাতিক মিত্রদের সক্রিয়তা

পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়ে যে, একাধিক দূতাবাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়। সেনাবাহিনী পরবর্তী দিনে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বসে, যেখানে সরাসরি ‘কু’ শব্দটি উচ্চারিত হয় বলে দাবি করেন জিয়া হাসান। এইসব প্রসঙ্গে কনক সারওয়ার (Kanak Sarwar)সহ বিভিন্ন ইউটিউবারও আগেই সতর্ক করেছিলেন।

ড. ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনা

এ ঘটনার ফলশ্রুতিতে, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে পদত্যাগের কথা বলেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। জিয়া হাসান বলেন, “এটি ছিল সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট।”

“আমরা চাই না মিলিটারি ছায়া সরকার হোক”

জিয়া লেখেন, “বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। বাংলাদেশে মিলিটারির গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি লয়ালিটির ইতিহাস আছে। আমরা চাই না মিলিটারি ছায়া সরকারে পরিণত হোক।”

মিডিয়ার নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ

সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় ছিল—ঘটনাটি জানার পরও কোনো মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা বিশিষ্ট ইউটিউবার এই বিষয়ে কথা বলেননি। “আমি একজন ইকোনমিস্ট, কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে আমাকেই লিখতে হচ্ছে,” বলে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন জিয়া হাসান।