নিউইয়র্ক টাইমস (New York Times) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) চলমান রাজনৈতিক চাপ, সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থনহীনতা, এবং নির্বাচনী পরিকল্পনায় বাধার মুখে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। প্রতিবেদনটি শিরোনাম করে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি’।
গণতন্ত্রের প্রত্যাশা ও হতাশা
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি আদর্শবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের পর লাখো মানুষ গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ উদযাপন করেন। তবে নয় মাস পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি, যা অনেকের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে।
নির্বাচন আয়োজনের ধীরগতি ও বাধা
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস মনে করছেন, রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা না পেলে তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবেন না। গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) তিনি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং পদত্যাগের হুমকি দেন। প্রতিবেদনে জানানো হয়, তিনি পদত্যাগপত্রের খসড়া প্রস্তুত করেও ফেলেছিলেন।
তার এক ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের ধীরগতিতে অগ্রগতি, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (General Waqar Uz Zaman)–এর ‘এ বছরই নির্বাচন হওয়া উচিত’ মন্তব্য এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ক্রমাগত সমালোচনা ইউনূসকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
সমালোচনার মুখে নেতৃত্ব
মোবাশ্বার হাসান (Mobashar Hasan), রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূস ভালো ব্যাংকার বা সংগঠন পরিচালক হলেও, রাজনৈতিকভাবে দৃঢ় ও শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রদানে তিনি দুর্বল।” তিনি মনে করেন, ইউনূস তার উপদেষ্টাদের দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত।
বিএনপি ও সেনাবাহিনীর চাপ
বর্তমানে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) (Bangladesh Nationalist Party – BNP)–এর ক্রমবর্ধমান চাপে ইউনূস নিজেকে একা অনুভব করছেন। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, নির্বাচনের আগে জনগণের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নিশ্চিত করা জরুরি।
ইউনূস মনে করেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন সম্ভব হতে পারে, তবে এখনো তিনি নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করেননি। বর্তমানে তিনি মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিবেশ একটি অর্থবহ নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়।
হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক শূন্যতা
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার দল এখন লাঞ্ছিত এবং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশে কার্যত কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই। বিএনপি এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে হতাশা প্রকাশ
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং নিজের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।