বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের দিকে এগোচ্ছে দেশ। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, গুজব ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে শিগগিরই একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। ঈদের পর এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে।
গুজবের অবসান: পদত্যাগ করছেন না ড. ইউনূস
গত সপ্তাহজুড়ে ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে নানা গুজব ছড়ালেও তার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “স্যারের ক্ষমতা দরকার নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তার দরকার আছে।” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হয়েছে।
সেনাপ্রধানের বার্তা ও রাজনৈতিক ঐক্যমত্য
২১ মে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান (Waqar Uz Zaman) বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। এই বক্তব্যকে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা তা আমলে নিয়েছেন।
বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি (BNP) ও তার মিত্র দলগুলো বারবার দাবি করে আসছে—নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখসহ একটি রোডম্যাপ। ড. ইউনূস এই দাবি পূরণে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। সূত্র বলছে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা ও আলোচনার ইঙ্গিত
প্রধান উপদেষ্টা আসন্ন ঈদে বেগম খালেদা জিয়ার (Khaleda Zia) বাসায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনায় যেতে পারেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি হবে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সংকট নিরসনের ইতিবাচক পদক্ষেপ।
ইশরাক ইস্যু ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
গত সপ্তাহে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক (Engineer Ishraq)–এর মেয়র হিসেবে শপথ না নেওয়া নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। বিএনপি এ জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে দায়ী করে। দলটির নেতাকর্মীরা তার ও মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)–এর পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে নামেন। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি–বিরোধী ছাত্রদল এনসিপি নির্বাচন কমিশনে বিক্ষোভ করে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতামত
প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, “ড. ইউনূসের পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়, বরং সংকট আরও বাড়াবে। দেশবাসী তার কাছ থেকে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে।”
কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার (Farhad Mazhar) বলেন, “ড. ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে ভুল করেছেন। তাকে জনগণের ঐতিহাসিক অভিপ্রায়কে সম্মান করতে হবে।”
বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রতিক্রিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান (Nazrul Islam Khan) বলেন, “পদত্যাগ নয়, দ্রুত নির্বাচনই সংকট সমাধানে সহায়ক।”
সালাহ উদ্দিন আহমেদ (Salah Uddin Ahmed) বলেন, “আমরা চাই ড. ইউনূসই নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পালন করুন এবং জাতির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”
এবি পার্টি (AB Party) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, “ড. ইউনূসের পদত্যাগ নয়; বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান হোক।”
উপসংহার
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখন নির্বাচনের ঘোষণা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারের উপদেষ্টারাও একই কথা বলছেন—নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই হবে, এবং এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব।