নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত ওসমান পরিবার (Osman Family)-এর দুই সদস্য আজমেরী ওসমান (Azmeri Osman) ও অয়ন ওসমান (Ayon Osman) তাঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও শহরের উপর দাপট বজায় রাখার জন্য এক সময় ‘তামিল ছবির ভিলেন’-এর মতো পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান (Nasim Osman)-এর ছেলে আজমেরী ওসমান এবং তার ভাই শামীম ওসমান (Shamim Osman)-এর পরিবারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এই দুই ভাই নারায়ণগঞ্জ (Narayanganj) শহরে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেন।
হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের অভিযোগ
আজমেরী ওসমানকে ১৬টি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে তার প্রথম খুনের শিকার হন নিজ বাড়ির কেয়ারটেকার নুরুন্নবী। অভিযোগ ছিল, তিনি আজমেরীর বিষয়ে তার বাবাকে তথ্য দিয়েছিলেন। ২০০০ সালে এক সময়ের বন্ধু আলমগীরকে কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করেন আজমেরী। ২০০৯ সালে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ১৪ টুকরো করে ফেলার ঘটনাও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
নির্যাতন কেন্দ্র ও ধর্ষণের অভিযোগ
আল্লামা ইকবাল রোড (Allama Iqbal Road)-এ একটি টর্চার সেল পরিচালনা করতেন আজমেরী ওসমান। ২০১৩ সালের শুরুতে চাষাড়া এলাকায় একটি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গায়িকা উম্মে হানিকে ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর মেয়েটির পরিবারকে আর নারায়ণগঞ্জে দেখা যায়নি।
ত্বকী হত্যাকাণ্ড
২০১৩ সালের ৬ মার্চ সুধীজন পাঠাগার (Sudhijan Pathagar)-এ যাওয়ার পথে অপহৃত হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী (Tanvir Muhammad Taqi)। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী (Shitalakshya River) থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। ত্বকীর বাবা অভিযোগ করেন, ওসমান পরিবারের ১১ সদস্য মিলে তাকে হত্যা করেন। আজমেরীর সহযোগী শওকত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বেই ত্বকীকে হত্যা করা হয়।
ক্ষমতা, দখল ও গণআন্দোলন
আজমেরী ওসমান তার বাবার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের তেল সেক্টর ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার ছেলে অয়ন ওসমান শহরের মাসদাইর এলাকা (Masdair Area)-র নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তবে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, যার ফলে আজমেরী ওসমান বর্তমানে পলাতক।