জুলাই আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে চোখে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারানো আন্দোলনকারীরা এখনও উন্নত চিকিৎসা না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ৯ মাসেও দৃষ্টিশক্তি না ফেরায় হতাশ চারজন আন্দোলনকারী আত্মাহুতির চেষ্টা করেছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (National Institute of Ophthalmology and Hospital) চত্বরে।
আত্মাহুতির চেষ্টার ঘটনা
রোববার দুপুরে আন্দোলনে আহত চার যুবক—আলী হামজা শিমুল (১৯), মো. সাগর (১৮), আখতার হোসেন (২২) ও মারুফ আহমেদ (২১)—চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কক্ষের সামনে বিষপান করেন। পরে দ্রুত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (Shaheed Suhrawardy Medical College and Hospital)-এ ভর্তি করা হলে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল করা হয়।
তারা জানান, মোট সাতজন আত্মাহুতির পরিকল্পনায় ছিলেন। তবে চারজন বিষপান করলেও বাকিদের কাছ থেকে রাসায়নিক বোতল কেড়ে নেওয়া হয়। ব্যবহৃত বিষ ‘নাইট্রো’ নামের একটি পোকামাকড় মারার রাসায়নিক পদার্থ।
দীর্ঘ চিকিৎসাজট, নেই উন্নতি
আহতদের একজন জানান, তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Shahjalal University of Science and Technology) এলাকায় ১৯ জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন এবং গলায় ও ডান চোখে গুলি লাগে। একাধিক অস্ত্রোপচারের পরও চোখের আলো ফেরেনি।
আরেকজন, কুষ্টিয়ার আলী হামজা বলেন, ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে আহত হন এবং বাঁ চোখে ছররা গুলি বিদ্ধ হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ফলোআপ চিকিৎসা না পেয়ে দৃষ্টিশক্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরেও উন্নতি হয়নি
বিশ্বনাথের বাসিন্দা আখতার হোসেন কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুর (Singapore) থেকে চিকিৎসা শেষে ফেরেন। তার বাম চোখে শুধু আলো দেখা যায়, কোনো বস্তু দেখা যায় না। পুনর্বাসনের উদ্যোগ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মে মাস পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান তিনি।
ফাউন্ডেশনের মতবিনিময় সভা ও প্রতিবাদ
রোববার দুপুরে পরিচালকের কক্ষে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন (July Martyrs’ Memorial Foundation) আয়োজিত সভায় আন্দোলনকারীরা উপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ভবিষ্যৎ জীবনমান নিয়ে আলোচনার সময় চিকিৎসাধীন আহতরা হঠাৎ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর কক্ষ থেকে বেরিয়ে বিষপান করেন চারজন।
‘মরে যাওয়ার চেয়ে বাঁচাটা বেশি কষ্টকর’
আলী হামজা জানান, তারা পরিকল্পনাহীনভাবে এই পদক্ষেপ নেননি। ১০ মাস ধরে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়ানো, অবহেলা ও চিকিৎসায় উন্নতি না পাওয়ার হতাশা থেকেই আত্মাহুতির সিদ্ধান্তে আসেন। একজন চিকিৎসক প্রথমে বিদেশে রেফার করার আশ্বাস দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে বলেন, “তোমরা যা খুশি তাই করো”—এই কথার পরই তারা বিষপানের সিদ্ধান্ত নেন।
চিকিৎসকদের নিরুত্তরতা
আহতদের স্বজন ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের (July Memorial Foundation) স্বেচ্ছাসেবক নাদিয়া জানান, কারও চোখে দৃষ্টিশক্তি ফেরানোর সম্ভাবনা চিকিৎসকরা একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকের চোখে সংক্রমণ শুরু হয়েছে যা ভালো চোখকেও আক্রান্ত করছে।
করণীয় সম্পর্কে আহ্বান
এ ঘটনায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয় আহতদের ভীতি ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা। সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদ্দেশে আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ, পুনর্বাসনের উদ্যোগ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ নিশ্চিত করা হয়।