২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal) ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের পতনের জন্য জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) এবং দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর (এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি) ব্যর্থতা ও ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেন। একইসঙ্গে তিনি পুনরায় ‘অস্ত্র হাতে নেওয়ার’ হুমকি দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিস্ফোরক মন্তব্য
দ্য ওয়াল (The Wall) নামক ভারতীয় পোর্টালকে দেওয়া ২৫ মিনিটের এক সাক্ষাৎকারে কামাল এসব মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি নেন দ্য ওয়ালের নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকার (Amal Sarkar)।
তিনি বলেন, “আমরা বসে থাকবো না, আমরা শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে নেব।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগেও অনুশোচনা নেই
শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এবং কামালসহ তৎকালীন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)–এ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল করা হয়েছে। কামাল ছিলেন জুলাই গণহত্যার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। তবুও সাক্ষাৎকারে কোনো অনুশোচনা বা দায় স্বীকার করতে দেখা যায়নি তাকে।
গোয়েন্দাদের ভূমিকা ও ব্যর্থতা
কামালের দাবি, “গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি রিপোর্ট করে। কিন্তু তারা সময়মতো সতর্ক করেনি, এমনকি ষড়যন্ত্রেও জড়িত থাকতে পারে।” এনএসআই, ডিজিএফআই এবং এসবির ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
জামায়াত ও ড. ইউনূসকে দায়ী করা
কামাল আরও বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর মতো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)–কে সামনে রেখে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল।” তিনি পুলিশের পক্ষ থেকে চালানো প্রাণঘাতী অভিযানের পক্ষে যুক্তি দেন এবং বলেন, “আমরা কেবল আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করেছি।”
হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক
তিনি দাবি করেন, জুলাইয়ে যে হতাহতের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তার অনেকটাই বিভ্রান্তিকর। “অনেক পুরনো মৃত্যু ও রাজনৈতিক হতাহতকে ঐ সময়ের সঙ্গে মেলানো হয়েছে,”—বলেন তিনি।
কোটা আন্দোলনের পেছনের কাহিনি
সাক্ষাৎকারে কামাল বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে এক দফার আন্দোলনে রূপান্তর ঘটে, যা শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের দিকে যায়।” তিনি বলেন, “হাসিনা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হন।”
বিচারের দাবির প্রেক্ষাপট
এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)–কে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। অভিযোগে জুলাই গণহত্যায় পাঁচটি পৃথক মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ রয়েছে।
হুমকি ও পাল্টা প্রতিরোধের হুঙ্কার
সাক্ষাৎকারের একাধিক অংশে কামাল আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিয়েছি, এখন তারা আমাদের ফাঁসি দিচ্ছে।” তার বক্তব্যে বারবার ফিরে আসে ‘প্রতিরোধ’ এবং ‘প্রয়োজনে অস্ত্র’ তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের সাবেক উচ্চপদস্থ এক ব্যক্তির এমন বক্তব্য রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।