গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতিতে এবারের বাজেট যেন এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বা মেগা প্রকল্পের ঘোষণা নয়, বরং এবার জনজীবনে বাস্তব প্রভাব ফেলার মতো নীতিমালাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা (Finance Adviser) জানিয়েছেন, ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট দিয়েই জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের জন্য আলাদা শ্রেণি ও বাজেট বরাদ্দ
এই বাজেটে প্রথমবারের মতো জুলাই গণঅভ্যুত্থান (July Uprising) অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি আলাদা আয়কর শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে। এই শ্রেণির আওতায় থাকা যোদ্ধারা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত সুবিধা পাবেন, যা কার্যকর হবে আগামী দুই অর্থবছরে।
এ ছাড়া, শহীদ ও আহতদের পরিবারে জন্য ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গঠিত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ ও গণভবন (Ganabhaban)-কে স্মৃতি জাদুঘর রূপান্তরের কার্যক্রম।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘভাতা
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ঘোষিত পাঁচ বছর মেয়াদি মহার্ঘভাতা চালু হলে ব্যয় হবে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। এটি কর্মীদের আয় সুরক্ষা ও খরচ সামাল দিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর সংস্কার ও বৈদেশিক নির্ভরতা
চলতি বাজেটে একক ভ্যাট হার (সম্ভাব্য ১৫%) চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাধ্যতামূলক ডিজিটাল ট্যাক্স রিটার্ন এবং সাবসিডি কমিয়ে আইএমএফ (IMF) ও সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হবে।
শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয়ে মোট ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ পাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (Secondary and Higher Education Division)।
সুশাসনের অঙ্গীকার
অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, “দুর্নীতি ও শোষণের কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছেছিল। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠাই হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
এছাড়া, দেশে প্রথমবারের মতো জিডিপি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মুদ্রা বিনিময় ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ
তিনি বলেন, “বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব না থাকলেও, বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।” মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা।
বাজেট পাস হবে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে
সংসদ (Parliament) কার্যকর না থাকায় এবারের বাজেট পাস হবে রাষ্ট্রপতি (President) কর্তৃক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে।