জাতীয় সরকারের নীলনকশা কি পর্দার আড়ালেই তৈরি হচ্ছে?

বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে? নির্বাচন প্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government) স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি। বরং চলছে সংস্কার-সংলাপ-জুলাই সনদ ঘিরে নানা উদ্যোগ। এরই মাঝে গুঞ্জন উঠেছে—পর্দার আড়ালে একটি জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা এগিয়ে চলেছে।

নির্বাচন নয়, চলছে দ্বিতীয় রাউন্ড সংলাপ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission) মাসব্যাপী বৈঠকের পর জানায়, এখন হবে দ্বিতীয় রাউন্ড সংলাপ। অনেকেই মনে করছেন, এটি কেবল সময়ক্ষেপণের কৌশল। যদিও ইউনূস বলেছেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে।” কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এখনো নির্বাচনমুখী কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়ছে না।

বিএনপির অবস্থান: ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাই

বিএনপি (BNP)–র পক্ষ থেকে মির্জা আব্বাস এবং তারেক রহমান (Mirza Abbas, Tarique Rahman) বলেছেন—ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। কিন্তু সরকারের দিক থেকে নেই তেমন পদক্ষেপ।

জাতীয় সরকারের গুঞ্জন

আলোচনার কেন্দ্রে এখন জাতীয় সরকার। রাজনৈতিক মহলে চুপিচুপি আলোচনা চলছে—জাতীয় সরকার হবে কি না, হলে কে হবেন রাষ্ট্রপতি বা প্রধান? জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই প্রস্তাব দিয়েছেন কিছু সুশীল সমাজ (Civil Society) নেতা। প্রথম দফায় বিএনপি জাতীয় সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিতীয় দফার উদ্যোগ আসে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন (President Md. Shahabuddin) অপসারণ ইস্যু ঘিরে।

ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব?

বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, ড. ইউনূস নিজেই রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন, মন্ত্রীসভা গঠন করে সকল রাজনৈতিক দলকে একটি সর্বদলীয় কাঠামোয় আনতে চেয়েছিলেন। পরিকল্পনায় ছিল—বিএনপি ২৫%, জাতীয় নাগরিক কমিটি বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২৫% এবং জামায়াত ও অন্যান্য দল বাকি অংশে থাকবে।

বিএনপি বলছে ‘না’, জনগণের রায় চায়

বিএনপি স্পষ্ট বলেছে, তারা জাতীয় সরকারে যাবে না। তাদের লক্ষ্য একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনআমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) বলেছেন, “অনির্বাচিত সরকার দেশের সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ। এখন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে।”

এনসিপির অবস্থান: নির্বাচন নয়, আগে সংস্কার

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বর্তমানে নির্বাচন চায় না। তারা বলছে, আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন। তাদের প্রস্তাব:

  • গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের চূড়ান্ত অনুমোদন
  • নতুন সংবিধান প্রণয়ন
  • গণপরিষদ নির্বাচন
  • এরপর জাতীয় নির্বাচন

রাষ্ট্রপতি অকার্যকর? ক্ষমতা নিতে চায় ইউনূসপন্থীরা

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এখন অনেকটাই অকার্যকর। ড. ইউনূস একাধিকবার সৌজন্য সাক্ষাৎ না করেই বঙ্গভবনে এড়িয়ে গেছেন। ঈদের জামাতে প্রধান উপদেষ্টার আপত্তিতে রাষ্ট্রপতি যাননি বলেও সূত্র জানায়।

এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার উদ্যোগ চলছে বলে গুঞ্জন। তাহলে জাতীয় সরকার চালাতে আর কোনো সাংবিধানিক বাধা থাকবে না বলে মনে করছেন এনসিপির নেতারা।

জনরোষ এড়ানো কঠিন হবে?

বিএনপি আশঙ্কা করছে, জাতীয় সরকার গঠনের নামে আবারো স্বৈরাচার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। জনগণ এতে ক্ষুব্ধ হবে। প্রয়োজন হলে আবারও গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন একটাই—নির্বাচন হবে, না জাতীয় সরকার? রাজপথে না, উত্তর নির্ধারিত হচ্ছে কূটনীতিক চ্যানেল এবং ড্রইং রুমে