অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (Interim Government) কর্তৃক ঘোষিত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ বা প্রণোদনার ঘোষণা দেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ (Dr. Salehuddin Ahmed) জানান, জুলাই ২০২৫ থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা বেতন স্কেল অনুযায়ী ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা পাবেন।
কী এই ‘বিশেষ সুবিধা’?
ঘোষণা অনুযায়ী, নবম গ্রেড পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১০% এবং দশম থেকে বিশতম গ্রেডভুক্তরা ১৫% হারে আর্থিক সুবিধা পাবেন। এর আওতায় থাকবে জাতীয় বেতন স্কেলে থাকা সব বেসামরিক কর্মকর্তা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) ও পুলিশ বাহিনী (Police)।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
এ ঘোষণা সাধারণ জনগণ ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিযোগ, এ ধরনের সুবিধা বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওপর চাপ ফেলবে। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হলে তারা বেশি উপকৃত হতেন।
সানেম (SANEM)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “বিশেষ সুবিধা” টার্মটির ওপরই আপত্তি আছে। তার মতে, যখন বৈষম্য হ্রাসের কথা বলা হচ্ছে, তখন শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বৈষম্য আরও বাড়াবে।
তিনি আরও বলেন, “৯০% জনগণ সরকারি চাকরির বাইরে। তাদের জন্য কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না রেখে শুধুমাত্র একটি শ্রেণির জন্য সুবিধা দিলে তা অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে।”
বাজেট ও রাজস্ব প্রেক্ষাপট
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মোট আয় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) (NBR)। বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি, কিন্তু কর হার ধাপে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে বেশিরভাগ করদাতার করভার বাড়বে।
বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়কর বাড়ানোর এই দ্বৈত সিদ্ধান্তে সাধারণ নাগরিকদের চাপ বাড়বে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫% ইনক্রিমেন্ট ও ৫% প্রণোদনা দিয়েছিলেন। এবার তা বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নতুনভাবে ১০-১৫% বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিলো।
এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করছেন, আগের সরকার যেভাবে নির্দিষ্ট শ্রেণিকে সুবিধা দিয়েছে, বর্তমান সরকারও একই পথ অনুসরণ করছে। যা অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বাড়াবে এবং সাধারণ মানুষকে বাড়তি চাপের মুখে ফেলবে।