লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক: নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে আলোচনা সম্ভাব্য

লন্ডন (London) সফররত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এবং বিএনপি (BNP)’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) শুক্রবার লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে একান্ত বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এই প্রথমবারের মতো তাদের মধ্যে সরাসরি বৈঠক হতে যাচ্ছে যেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় থাকবে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার।

বৈঠকের সময় ও স্থান

চারদিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই দুই ঘণ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্ধারিত সময় ও আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে তারেক রহমানকে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি

এই বৈঠককে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তারেক রহমান। বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মতামত গ্রহণ করেন তিনি। যদিও শুরুতে কয়েকজন নেতার দ্বিমত ছিল, শেষ পর্যন্ত সবাই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) সাংবাদিকদের জানান, এই বৈঠক একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে এবং তারেক রহমানকে সব ধরনের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।

সরকারের অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

সরকারের পক্ষ থেকেও এই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam) জানান, দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে এই বৈঠক দেশবাসীর জন্য একটি পজিটিভ মেসেজ বহন করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে সরকারের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বিএনপি-র সমর্থন প্রয়োজন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন, আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, যদিও বিএনপি আপাতত এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈঠকের গুরুত্ব

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Revolutionary Workers Party)’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (Saiful Haque) এই বৈঠককে শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক নয়, বরং জাতীয় স্বার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী সময়, বিদেশি তৎপরতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ এজেন্ডা এই আলোচনায় আসতে পারে।

খালেদা জিয়ার পরামর্শ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঈদের সন্ধ্যায় সাক্ষাতে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে না জড়ানোর পরামর্শ দেন এবং বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে পর্যবেক্ষণ

বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, বৈঠকের আগে তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং বৈঠকের পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে এই সাক্ষাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।