দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের (Awami League) প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (Mofazzal Hossain Chowdhury Maya) বর্তমানে জনসম্মুখ থেকে সম্পূর্ণরূপে অন্তর্ধান করেছেন। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। কেউ বলছেন তিনি বিদেশে, কেউ বলছেন দেশেই আত্মগোপনে।
অতীতের প্রভাবশালী রাজনীতিক, বর্তমানে বিতর্কিত মুখ
ঢাকার ‘রাজনৈতিক গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত মায়া চৌধুরী ২০১৪ সালের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ রুখে দেওয়ার ঘটনায় বিশেষভাবে আলোচিত হন। গুলিস্তানে গামছা কাঁধে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ভয়ে বাসা থেকে গামছা নিয়ে এসেছি, পালাতে হলে কাজে লাগবে।”
সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। রাজনৈতিক মহলে এখন একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে— “মায়া চৌধুরী কোথায়?”
দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও ক্ষমতা ভোগ
সূত্র জানায়, দুর্নীতির মামলায় দুদক (ACC) কর্তৃক ১৩ বছরের সাজা হলেও ক্ষমতার অপব্যবহারে তিনি খালাস পান। এরপরও তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আসীন হন এবং ১২তম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন।
২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এই মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েন।
অপরাধজগতের ‘চৌধুরী সাম্রাজ্য’
তার দুই ছেলে—প্রয়াত দীপু চৌধুরী ও রনি চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাজধানীতে হত্যা, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব দখল নিয়ে খুনসহ বহু ঘটনায় দীপু জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের (Narayanganj) আলোচিত ৭ খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তার জামাতা ও র্যাব-১১ এর তৎকালীন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ। এই র্যাব কর্মকর্তা ছিলেন তার মেয়ের স্বামী। সেই সময়ে রনি ও দীপু র্যাবের প্রভাব কাজে লাগিয়ে অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন।
মতলবে একক আধিপত্য ও নির্যাতনের রাজনীতি
মায়ার সংসদীয় এলাকা মতলব উত্তর-দক্ষিণ (Matlab Uttar-Dakshin) ছিল তার পরিবারের একক নিয়ন্ত্রণে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জনপ্রতিনিধির পদ ১-২ কোটি টাকায় বিক্রি করতেন এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হামলা-মামলার মাধ্যমে কোণঠাসা করে রাখতেন।
সাবেক ছাত্রদল নেতা আশরাফুর রহমান বাবু বলেন, “আমি বিএনপির রাজনীতি করার কারণে মায়া বাহিনী আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশের সংস্কৃতি হতে পারে না।”
মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনে মায়া-দীপু মনির সিন্ডিকেট
মেঘনা নদী (Meghna River) থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন মায়া ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি (Dipu Moni)। এতে মেঘনা-ধনাগদা সেচ প্রকল্পসহ মতলব উত্তরের ৬৮ কিলোমিটারের বেরিবাঁধ হুমকিতে পড়ে।
আত্মগোপন ও বর্তমান পরিস্থিতি
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দীপু মনি ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাছির উদ্দীন (Nasir Uddin) গ্রেফতার হলেও মায়া এখনো অধরা। জানা গেছে, তার বিদেশে পাচার করা সম্পদ এবং দেশীয় সম্পত্তি দেখভাল করছে পিএস মামুন, যিনি এখন আত্মগোপনে।
স্থানীয়রা বলছেন, “অবশেষে নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছে মতলববাসী। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—মায়া এখন কোথায়?”