‘লন্ডন বৈঠক’ নিয়ে ক্ষোভে ঐকমত্য সংলাপ বয়কট করল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

‘লন্ডন বৈঠক’ ঘিরে অসন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami) বয়কট করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission) আয়োজিত সংলাপ। আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর বেইলি রোড এর ফরেন সার্ভিস একাডেমি-তে সংবিধান সংস্কার নিয়ে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী সংলাপের দ্বিতীয় ধাপে জামায়াত অংশ নেয়নি।

একক দলভিত্তিক বৈঠকের প্রতিবাদে বয়কট

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ (Dr. Hamidur Rahman Azad) জানান, সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শুধুমাত্র বিএনপি (BNP)-র সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনকাল ঠিক করায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করবে।

জানা গেছে, আজকের বয়কট প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে আলোচনায় ফিরতে পারে জামায়াত। তবে, ঐকমত্য কমিশনের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে, সংলাপে ফেরার বিষয়ে দলটি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

লন্ডন বৈঠকের পটভূমি

গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর সঙ্গে। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতির উপর নির্ভর করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এই যৌথ বিবৃতি এবং একক বৈঠককে ঘিরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় জামায়াত। দলটির বিবৃতিতে বলা হয়, শুধুমাত্র একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে প্রেস ব্রিফিং দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয়

জামায়াত মনে করে, শুধুমাত্র বিএনপিকে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে সরকার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। তাদের মতে, এই ধারা চলতে থাকলে নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তারা সরকারের প্রতি নিরপেক্ষ আচরণ এবং সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।

জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ (Matiur Rahman Akand) জানান, তারা আজ সংলাপে অংশ নিচ্ছেন না। অতীতে সংলাপে প্রতিনিধিত্ব করা এক জামায়াত নেতা বলেন, সরকার যদি বিএনপির সঙ্গে আলোচনাকেই সংস্কারের একমাত্র পথ হিসেবে বিবেচনা করে, তবে এ ধরনের সংলাপ অর্থহীন।

আলোচনার বিষয় ও মতানৈক্য

আজকের সংলাপে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলকে দেওয়ার মতো বিষয় উঠে আসে। কিন্তু এসব ইস্যুতেই বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ। তবে মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের কাছাকাছি অবস্থানে আছে।