ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে ফের শুরু হয়েছে মেরুকরণ ও জোট গঠনের তোড়জোড়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami) ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে একটি বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টা করছে, তবে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে বড় দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি (National Citizens’ Party – NCP) এখনো জোটে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি।
জোট গঠনে বিএনপির সক্রিয়তা
বিএনপি (BNP) ইতোমধ্যেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি শুরু করেছে। লন্ডনে দলের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছেন। দলটি ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং সম্ভাব্য মিত্রদের সঙ্গে জোট বা সমঝোতার কথা ভাবছে।
জামায়াতের উদ্যোগ ও সংশয়
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গঠনের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অনেকেই প্রার্থী ঠিক করেননি, পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে সময় লাগবে।
এনসিপি’র অবস্থান
আক্তার হোসেন, এনসিপির সদস্য সচিব জানান, তারা এখনো জোটে যাবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে জাতীয় স্বার্থে আদর্শ ও কর্মসূচির মিল থাকলে জোটে যেতে পারে।
ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের প্রচেষ্টা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, ও খেলাফত মজলিস একসঙ্গে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের মধ্যে একক প্রার্থী দেয়ার কৌশল নিয়েও আলোচনা চলছে।
গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র জানান, ইসলামপন্থি ভোট যেন বিভক্ত না হয় সে লক্ষ্যেই তারা অগ্রসর হচ্ছেন।
মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, সব ইসলামি দল ও মতকে একত্র করার চেষ্টা চলছে।
বিএনপি ও খেলাফত মজলিসের সম্পর্ক
মুহাম্মাদ মামুনুল হক-এর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকেও বিএনপির সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার পিতা আল্লামা আজিজুল হক বিএনপির চার দলীয় জোটে ছিলেন, যা ভবিষ্যতের মিত্রতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, জামায়াতের অবস্থান দুর্বল এবং এককভাবে ভোটে তেমন সাফল্য পাবে না। অন্যদিকে, বিশ্লেষক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট গঠিত হবে, পাশাপাশি ইসলামপন্থি, বাম ও বৈষম্যবিরোধী দলের জোটও তৈরি হতে পারে। জামায়াত, এনসিপি এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলো শেষ মুহূর্তে একত্রিত হয়ে জোট করতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পরিবর্তনশীল ভোটের রাজনীতি
পর্যবেক্ষকদের মতে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপে তার ঘরানার প্রার্থীরা ভোটে অংশ নেবেন। এতে ভোট বিভাজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু ইসলামপন্থি দলগুলোর নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক রয়েছে, তাই তাদের প্রভাব কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।