আসন্ন জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টি (Jatiya Party)-তে তীব্র অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ২৮ জুন নির্ধারিত সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের (GM Quader)। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (Anisul Islam Mahmud) ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার (ABM Ruhul Amin Hawlader)।
সম্মেলন স্থগিত ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ
২০ মে প্রেসিডিয়াম সভায় ২৮ জুন সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয় এবং চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র (China-Maitree Conference Center) ভাড়া করা হয়। তবে একই দিনে একই স্থানে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি থাকার অজুহাতে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পরপরই দলের সিনিয়র নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার সম্মেলন যথাসময়ে আয়োজনের আহ্বান জানান এবং জানান যে, তারা যথাক্রমে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে প্রার্থী হবেন। এছাড়া তারা বিতর্কিত ধারা-২০ (ক) উপধারায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছেন, যা চেয়ারম্যানকে এককভাবে নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা দেয়।
রাজনৈতিক ও তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া
দলের একাংশ মনে করছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ ভূমিকা নেওয়ার কারণে জাপার ইমেজ সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোই দলকে পুনরুদ্ধারের একমাত্র উপায়।
অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে জি এম কাদের রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও রংপুর (Rangpur)-এ তাঁর বাসভবনে হামলা হয়েছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদের (Sharifa Quader)-কে অভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC)।
রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পৃথক দল
রওশন এরশাদ (Raushon Ershad) জি এম কাদেরের নেতৃত্ব মানতে না পেরে জাপা থেকে বের হয়ে পৃথক দল গঠন করেন। তাঁর সঙ্গে কাজী ফিরোজ রশিদ (Kazi Firoz Rashid) ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা (Syed Abu Hossain Babla) যোগ দেন।
জি এম কাদের অভিযোগ করেন, দলীয় বিভক্তির পেছনে সরকারপন্থীদের ভূমিকা রয়েছে এবং এক শ্রেণির ‘আবর্জনার দল’ সবসময় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, “এঁদের কারণেই জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে অপবাদ দেওয়া হয়।”