জাতিসংঘ (United Nations) মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক (Volker Türk) সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টিকারী আইনি পরিবর্তন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
জেনেভায় জাতিসংঘ অধিবেশনে উদ্বেগ প্রকাশ
সোমবার, ১৬ জুন, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা (Geneva)তে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৯তম অধিবেশনে তাঁর বার্ষিক বক্তব্যে ফলকার টুর্ক এই উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, “আমি অনুপ্রাণিত বোধ করছি যে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের মাধ্যমে অগ্রগতি অর্জন করছে। আমি আহ্বান জানাই, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে অর্থবহ সংস্কারে তারা এগিয়ে যাক।”
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সুযোগ সৃষ্টিকারী আইন সংশোধন নিয়ে মন্তব্য
ফলকার টুর্ক আরও বলেন, “তবে সাম্প্রতিক আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ধরনের পরিবর্তন সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে অন্যায্যভাবে সীমিত করতে পারে।”
তিনি জানান, তাঁর দপ্তর বাংলাদেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে আগ্রহী।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধন ও দল নিষিদ্ধ
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে। এই আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সংগঠনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের আওতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (Bangladesh Awami League) এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal) আইনে ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তির রায় দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব নিয়ে সতর্কতা
ফলকার টুর্ক তাঁর বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী শুল্ক বৃদ্ধি ও বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই বাণিজ্যযুদ্ধ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সুনামির মতো আঘাত করবে এবং এর অভিঘাত বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া (Cambodia), শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka) এবং ভিয়েতনাম (Vietnam)–এর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানি খাতকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।