সরকারি চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগের (Awami League) পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের ৩৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (Directorate of Secondary and Higher Education)। দীর্ঘ ১০ মাস পর এই ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন।
১৯ জনকে তলব, ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে
জানা গেছে, আগামী ২৪ জুন ১৯ জন কর্মকর্তাকে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ে হাজির হতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন উইংয়ের পরিচালক কাজী মো. আবু কাইয়ুম (Kazi Md. Abu Kaiyum)। তারা ওই মিছিলে সরাসরি আওয়ামী লীগের (Awami League) পক্ষে স্লোগান দেন এবং বিএনপি (BNP) নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া (Begum Khaleda Zia) ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন।
এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা মুকিব মিয়া (Mukib Mia), যিনি পরে আওয়ামী লীগের (Awami League) লিফলেট বিতরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। যদিও এখনও পর্যন্ত অন্যদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় (Ministry of Education)।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (Mohibul Hasan Chowdhury Nowfel) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘এ যুগের রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন। এর জবাবে ৩ আগস্ট চট্টগ্রামে (Chattogram) তার বাসভবনে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এই হামলার প্রতিবাদে ৪ আগস্ট শিক্ষাভবনে (Shikkhabhaban) বিক্ষোভ করেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা।
তাদের স্লোগান ছিল— ‘চলছে লড়াই চলবে, শেখ হাসিনা লড়বে’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘দালাল-বদর-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘ঘাপটি মারা দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আমার মাটি, আমার মা, পাকিস্তান হবে না’, এবং ‘শিক্ষামন্ত্রীর (নওফেল) বাসায় হামলা কেন, খুনি খালেদা জবাব দে’। এসব স্লোগান ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
গোয়েন্দা তথ্য ও অতীত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
৩৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে অনেকেই অতীতে ছাত্রলীগ (Chhatra League)-এর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এদের অনেকে কর্মরত ছিলেন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়-এর বিভিন্ন প্রকল্পে।
তৎকালীন নিষ্ক্রিয়তা ও বর্তমান পদক্ষেপ
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগের দিন (৪ আগস্ট) অনুষ্ঠিত হয় ওই মিছিল। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ডিআইএ-এর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি—এমন অভিযোগও রয়েছে।
অবশেষে দীর্ঘ ১০ মাস পর ২৪ জুন ডাকা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। জানতে চাওয়া হবে— কে কার নির্দেশে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন এবং কারা এই কর্মকাণ্ডের পেছনে ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
সরকারি চাকরি আইনের চরম লঙ্ঘনে এই মিছিলে অংশ নেয়ায় অন্যান্য শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তাদের মতে, এই রাজনৈতিক কার্যকলাপ ক্যাডার সার্ভিসের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।