জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট প্রদানের সরকারি প্রকল্প

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (Ministry of Housing and Public Works) জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। রাজধানীর মিরপুর (Mirpur) ১৪ নম্বর সেকশনে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (National Housing Authority)।

প্রকল্পের বিবরণ

প্রকল্পের আওতায় ৬টি ১৪ তলা ও ১০টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১,৩৫৫ বর্গফুট। ফ্ল্যাটে থাকবে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি ড্রয়িংরুম, একটি লিভিংরুম, একটি খাবার কক্ষ, রান্নাঘর এবং তিনটি টয়লেট।

প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬২ কোটি টাকা, যা সরকারের কোষাগার থেকেই ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নাম—‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান প্রদানের নিমিত্তে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণকৃত নিজস্ব জমিতে (৩৬ জুলাই) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’। এটি বর্তমানে একনেক (ECNEC) সভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা

সরকার ইতোমধ্যেই প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা এককালীন অনুদান ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ এবং আগামী অর্থবছরে (২০২৫–২৬) আরও ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় (Ministry of Liberation War Affairs) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৬৭১টি পরিবারকে সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে, তবে ১৬৩টি পরিবার এখনো তা পায়নি। এর মধ্যে অন্তত ১৩৪টি ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে।

উত্তরাধিকার ও ফ্ল্যাট বরাদ্দে জটিলতা

১৬ জুন পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় উত্তরাধিকার নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়টি আলোচনা হয়। কর্মকর্তারা প্রশ্ন তোলেন—শহীদদের বাবা-মা, ভাই-বোন না স্ত্রী-সন্তান—কারা এই ফ্ল্যাটের উত্তরাধিকার হবেন। এই বিষয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ময়মনসিংহ (Mymensingh) জেলার নান্দাইল (Nandail) উপজেলার শহীদ হুমায়ুন কবিরের বড় ভাই হজরত আলী অভিযোগ করেন, তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ওয়ারিশের তথ্য না দিয়েই সঞ্চয়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। পরবর্তীতে নথি ঘেঁটে তা প্রমাণিত হয়।

ভবন নির্মাণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ভবনের নকশা অনুযায়ী ৮০৪টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে, তবে সংখ্যা কম–বেশি হতে পারে। বাকিদের জন্য শহীদ ও আহতদের আলাদা প্রকল্প নেওয়া হতে পারে। যারা কাজের অক্ষমতা বরণ করেছেন, তাঁদের জন্য পৃথক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।

এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট নির্মাণ করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (Dhaka North City Corporation)। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল বাসির (Syed Nurul Basir) বলেন, “কোনো পরিবারকে জোর করে ঢাকায় আনা হবে না। তারা চাইলে আসবে। এছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রির সুযোগ থাকবে না। যদি কেউ বিক্রি করতে চায়, তাহলে সরকারের অনুমোদন লাগবে।”

নিবন্ধন ফি হিসেবে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের সময় ১০ লাখ টাকা লাগতে পারে, তবে কে এই ফি পরিশোধ করবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।

পরিবারগুলোর প্রতিক্রিয়া

শহীদ মোহাম্মদ ইফতি আবদুল্লাহর বাবা মো. ইউনুস সরদার (Md. Yunus Sardar) বলেন, “এখন ভাড়া বাসায় থাকি। সরকার ফ্ল্যাট দিলে আমাদের অনেক উপকার হবে।”