বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ (Dhaka Metropolitan South) শাখার সেক্রেটারি এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ (Shafiqul Islam Masud) জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি রিমান্ডে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বিএনপির সঙ্গে থাকার কারণে রিমান্ডে নির্যাতন
ড. মাসুদ বলেন, “রিমান্ডে যদি ৫০টা লাঠির বাড়ি খাই, তার মধ্যে ৪৯টাই খেয়েছি বিএনপি (BNP)–র সঙ্গে থাকার জন্য।”
যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ও জামায়াতের অবস্থান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami)–র বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করেন তিনি। “আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে আমরা নির্দোষ,” বলেন ড. মাসুদ।
তিনি মনে করেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি রাজনৈতিক প্রকল্প ছিল এবং জামায়াত এখন সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত।
স্বাধীনতা, মানবতা ও জাতীয় দিবস পালন
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরে মাসুদ বলেন, “স্বাধীনতার তিনটি মূলভিত্তি— মানবিকতা, সাম্য ও ন্যায্যতা। এই আদর্শ নিয়েই আমরা কাজ করি। আমরা স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস পালন করি।”
জামায়াত নেতাদের প্রসঙ্গে বক্তব্য
তিনি বলেন, “মতিউর রহমান নিজামী, প্রফেসর গোলাম আজমসহ আমাদের অনেক শীর্ষ নেতাকে ফাঁসির মঞ্চে যেতে হয়েছে দেশপ্রেমের জন্য। যদি তারা আপস করতেন, তাহলে এমনটি হতো না।”
প্রফেসর গোলাম আজম (Ghulam Azam)–এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন— কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।”
কোরআন ও ধর্মীয় আদর্শ নিয়ে অবস্থান
তিনি সমালোচনার জবাবে বলেন, “আমরা কোরআনের সংস্কারমূলক দায়িত্ব পালন করছি। জামায়াত যদি শরিয়াহর কথা বলে, নামাজের কথা বলে, তার বিরোধিতা মানেই কোরআনের বিরোধিতা।”
শাহবাগ আন্দোলন ও স্লোগান নিয়ে মন্তব্য
শাহবাগ (Shahbagh) আন্দোলনের সময় আলোচিত ‘গোলাম আজমের বাংলা’ স্লোগান প্রসঙ্গে বলেন, “এটা আমাদের দলের কোনো দায়িত্বশীল নেতৃত্ব দেয়নি। হয়তো কেউ আবেগে বলে ফেলেছে।”
এনসিপি ও জাতীয় ঐক্য
এনসিপি (NCP) নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও অনেক বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে বলে জানান ড. মাসুদ। তিনি বলেন, “একক জোটের চেয়ে জাতীয় ঐক্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
নির্বাচন ও প্রশাসনের ভূমিকা
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মাসুদ বলেন, “মানুষ চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন, যাতে তারা ভোট দিতে ও পাহারা দিতে পারে।” ঈদের সময় তিনি ৫০টি বাজার পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে বলেন, “মানুষ বলেছে, ভোট লাগবে না, শুধু ব্যালটবাক্সটা নিরাপদে পৌঁছাক।”
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। বলেন, “প্রশাসন মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। থানা থেকে অপরাধীরা ছাড়া পাচ্ছে, তদবিরে কাজ চলছে।”
তরুণদের প্রত্যাশা ও রাজনীতির দুর্ভাগ্য
তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম নিরাপদ জীবন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার চায়। জামায়াত সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।”
শেষে তিনি বলেন, “১৭ বছর ধরে যারা আমাদের সঙ্গে নির্যাতিত হয়েছেন, যারা আমাদের সঙ্গে কারাভোগ করেছেন, তারা যদি আজ মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে সেটাই রাজনীতির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন— বিশ্বাসযোগ্যতা, জবাবদিহিতা ও জনসম্পৃক্ততা বলেও মনে করেন ড. মাসুদ।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/nKWkWTwkE1k?si=3-2Lj7usaYSr-oqJ