বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিন সিইসির বিরুদ্ধে ইসিতে বিএনপির নালিশ

বিএনপি (BNP) বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সাংবিধানিক লঙ্ঘন এবং অনিয়মের অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও তিন জন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ জমা দিয়েছে।

রোববার (২২ জুন) সকালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান (Md. Salahuddin Khan)-এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই অভিযোগ দাখিল করেন। এ সময় তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, সচিব এবং কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রটি এখনো চূড়ান্ত নয় এবং তদন্তের মাধ্যমে আরও অভিযুক্তদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।

তিন বিতর্কিত নির্বাচন ও কমিশনের ভূমিকা

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ করে বিএনপি। তারা দাবি করেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (Awami League) ভোটের আগের রাতেই সিল মেরে একতরফা ফলাফল নিশ্চিত করে। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পায় ২৮৮টি আসন, আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র ৮টি আসন।

ওই সময়কার নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলেন কে এম নুরুল হুদা (K M Nurul Huda)। কমিশনের অন্য সদস্যরা ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম (Md. Rafiqul Islam), কবিতা খানম (Kobita Khanam), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (Brig. Gen. (Retd.) Shahadat Hossain Chowdhury) এবং প্রয়াত মাহবুব তালুকদার (Mahbub Talukder)।

পরবর্তী সময়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal) কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ভোটের দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলা হলেও, এক ঘণ্টার ব্যবধানে তা বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। শুরুতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেই ২৮ শতাংশ বললেও পরে সংশোধন করে ৪০ শতাংশ উল্লেখ করেন।

এই কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান (Brig. Gen. (Retd.) Md. Ahsan Habib Khan), মো. আনিছুর রহমান (Md. Anisur Rahman), মো. আলমগীর (Md. Alamgir) এবং বেগম রাশেদা সুলতানা (Begum Rasheda Sultana)।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত হতে পারেন

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নামও তদন্তের মাধ্যমে তালিকায় যুক্ত করা হবে। এর আগে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ভোট জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

বর্তমানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, হাবিবুল আউয়াল লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।