জাতীয় পার্টি (Jatiya Party)-তে ফের দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে নাটকীয়তা। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের (GM Quader) অভিযোগ করেছেন, দলের একাংশ তাকে বাদ দিয়ে বৃহৎ একটি বিএনপি বিরোধী জোটে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি তৈরি করছে।
কাউন্সিল ঘিরে উত্তেজনা
২০ মে দলের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে আগামী ২৮ জুন সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে জি এম কাদের তা হঠাৎ স্থগিত করে জানান, সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র (Bangladesh-China Friendship Conference Center) পাওয়া যায়নি। অথচ একই তারিখে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (Anisul Islam Mahmud), কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (ABM Ruhul Amin Hawlader) ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু (Mujibul Haque Chunnu)।
জানা গেছে, ওই সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব পদে রুহুল আমিন হাওলাদার। দুজনই বিগত বাতিল হওয়া সংসদের সদস্য ছিলেন এবং ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
জি এম কাদেরের অভিযোগ: ষড়যন্ত্র ও ‘মাইনাস’ পরিকল্পনা
জি এম কাদের দাবি করেন, তাকে বাদ দিয়ে একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী দলকে ভাঙা হচ্ছে। তার ভাষ্য, আনিসুল ও হাওলাদার নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করছেন সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে থাকলে গ্রেপ্তার এড়ানো যাবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চালানো যাবে। এমনকি তাকে শিগগিরই জেলে পাঠানো হবে এবং তাদের ‘লাঙল’ প্রতীক দেওয়া হবে—এই ধরনের বার্তাও ছড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্রের আলোচিত ২০(ক) ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যান যে কোনো সময় যে কোনো নেতাকে অব্যাহতি দিতে পারেন। এই ধারাই সংশোধনের টার্গেট। তার মতে, এটি একটি বড় দলের ইন্ধনে করা ষড়যন্ত্র।
চুন্নুর পাল্টা বক্তব্য: কাউন্সিল নিয়ম মেনেই হচ্ছে
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সম্মেলনের তারিখ ছিল প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সম্মেলন কাউকে বাদ দিতে নয়, বরং গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য। গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়টিও প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত। জি এম কাদের যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করছেন, তা ‘মূল্যহীন’ এবং তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি বলেও দাবি করেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও অভ্যন্তরীণ মতভেদ
জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এখন আর দল নেই—তাই ‘প্লাস-মাইনাস’ শব্দের মানে নেই। যা হচ্ছে, তা দল টিকিয়ে রাখার কৌশল। সরকারি ঘনিষ্ঠ দলগুলোর সঙ্গে জাপার একাংশের যোগাযোগ হয়েছে এবং বিএনপি বিরোধী একটি বৃহৎ জোটে তাদের জায়গা করে দিতে কাজ চলছে।
জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মঈনুর রাব্বি চৌধুরী রুমন বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জি এম কাদের ছাড়া জাতীয় পার্টিকে কেউ গ্রহণ করবে না। তাই বর্তমান সংকট নাটকও হতে পারে।
অতীত ইতিহাস: বারবার বিভাজন
২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে জাতীয় পার্টি বিভক্তির পথে হাঁটছে। ভাই জি এম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদ (Raushan Ershad)-এর মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব এবং শেখ হাসিনার সরকারে অংশগ্রহণ দলের ‘স্বাধীনতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বর্তমানে আবারও নির্বাচনপূর্ব ‘ভাঙনের নাটক’ কি নতুন কোনো জোটে যুক্ত হওয়ার ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে।