নীলফামারী (Nilphamari) জেলায় নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party) বা এনসিপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠন নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কমিটিগুলোতে দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ (Awami League), জাতীয় পার্টি (Jatiya Party) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (NAP) সংশ্লিষ্ট বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাঁদের কেউ কেউ পূর্বে ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন।
বিতর্কিত কমিটি গঠন ও পদত্যাগ
সম্প্রতি ডিমলা উপজেলা (Dimla Upazila), জলঢাকা উপজেলা (Jaldhaka Upazila) ও নীলফামারী জেলা (Nilphamari District) কমিটি গঠনের পরপরই এনসিপির একাধিক সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
ডিমলা উপজেলা কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়েছে জাতীয় পার্টির সক্রিয় নেতা মোশারফ হোসেন মিন্টুকে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন জাকারিয়া হোসেন রাজু, যিনি একসময় জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে ন্যাপের সভাপতি, এছাড়াও রয়েছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সদস্য রবিউল ইসলাম শুকারু।
জেলা কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হয়েছেন আব্দুল মজিদ, যিনি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই কমিটিতে আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট শামসুল হক শাহ (৩ নম্বর সদস্য) এবং জেলা তাঁতী লীগের প্রচার সম্পাদক আল আমিন ইসলাম (৭ নম্বর সদস্য), যিনি ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ভিডিও করে প্রশাসনের কাছে তুলে দেওয়ার অভিযোগে সমালোচিত।
জলঢাকা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফার ঘনিষ্ঠ রেজাউল করিম রাজু ও শরীফুজ্জামান শরীফ, যাদের নামও বিতর্কিতদের তালিকায়।
আদর্শচ্যুতি ও ক্ষোভ
জাতীয় নাগরিক পার্টি যে গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল, এই কমিটি সেই আদর্শ থেকে সরে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা কমিটির ২ নম্বর সদস্য আক্তারুজ্জামান বলেন, “এই কমিটিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিদের প্রমোট করা হচ্ছে।”
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী নেত্রী বলেন, “যদি অপরাধে অভিযুক্ত ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারীদের জায়গা দেওয়া হয়, তাহলে জনগণ এনসিপিকে আর বিশ্বাস করবে না।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ও পুনর্গঠনের আহ্বান
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী লাভলী আক্তার খুশি তার ফেসবুক পোস্টে সমালোচনা করে লিখেছেন, “এইলা কোনো কথা বাহে, একাম বাদ দিলেন ক্যানে তোমা? সবাই মিললা, ঝিললা চলির নাগে বাহে।” তিনি সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফা, আফতাব উদ্দিন, ফারজানা আক্তার সুমি, আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু, তবিবুল ইসলাম ও ফেরদৌস পারভেজসহ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তির কারণে দলটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ওয়ারিয়র্স অব জুলাই (Warriors of July)-এর নীলফামারী জেলা আহ্বায়ক সাইমুন সাকিব বলেন, “ফ্যাসিস্টদের দোসররা কমিটিতে স্থান পেয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিকে অনুরোধ করছি দ্রুত এদের সরিয়ে দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠন করা হোক।”
কেন্দ্রীয় কমিটির নীরবতা ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এনসিপির কেন্দ্রীয় কিংবা জেলা পর্যায়ের কেউ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিতর্ক বা অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ সংগঠনটির ভবিষ্যৎ গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।