মব রাজনীতির বুমেরাং: অতীতে যাদের তালি, আজ তাদেরই কান্না

সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতিতে আবারও সামনে এসেছে ‘মব’ শব্দটি—যেখানে জনতা ক্ষোভ প্রকাশের একমাত্র ভাষা হিসেবে রাস্তায় নেমে পড়ছে, কখনো প্রতীকী অপমানের পথ বেছে নিচ্ছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদা (AKM Nurul Huda)–কে ঘিরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা সেই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

মব রাজনীতির শুরু কোথায়?

অনেকে বলছেন, এই দেশে ‘মব’ রাজনীতি নতুন নয়। বরং শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের সময়েই এই সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকায়ন হয়। সেই সময় যারা রাষ্ট্রীয় সুবিধায় গঠিত জনতার তাণ্ডবকে নীরব প্রশ্রয় দিয়েছেন, আজ তারাই মবের শিকার হয়ে “গণতন্ত্র”, “আইন”, “মানবাধিকার” ইত্যাদি শব্দে আবেগ দেখাচ্ছেন।

হুদাকে ঘিরে প্রতিক্রিয়া: রাজনৈতিক প্রতিশোধ, না জনরায়?

বিএনপি (BNP)–র একাংশের নেতা-কর্মীরা যেভাবে সাবেক সিইসি হুদাকে জুতার মালা পরিয়ে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেছেন, সেটিকে ‘মব হেনস্তা’ বলে চিহ্নিত করেছে একটি বড় অংশের গণমাধ্যম, বিশেষ করে প্রথম আলো। তবে অনেকেই মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, বরং ভুক্তভোগী জনতার হতাশার বহিঃপ্রকাশ। তারা বলছেন, “যারা একসময় মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিতেন, আজ তারা ভুক্তভোগী হয়ে গণরোষের মুখে পড়েছেন।”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমেও বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। একজন জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট লেখেন, “যারা একসময় মব তাণ্ডবে উৎসাহ দিতেন, আজ তারাই বলছেন—আইনের শাসন থাকা উচিত। তাহলে সেই সময় আইন কোথায় ছিল?” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “যারা হুদার নেতৃত্বে সংঘটিত ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভ যৌক্তিক।”

গণরোষের ভাষা বনাম আইনের পরিসর

তবে প্রশ্ন থাকে—রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কি এইভাবে মবের মাধ্যমে রূপ নেয়া উচিত? একজন নাগরিক হিসেবে আইনের শাসনের দাবি যেমন জরুরি, তেমনি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জন্ম নেওয়া জনরোষের প্রতিফলনও অস্বীকার করা যায় না। যেকোনো সুশাসনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ন্যায়বিচার আর স্বচ্ছ জবাবদিহিতার ওপর—not মব জাস্টিসে।