আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান (Shajahan Khan) দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মব গঠনের মাধ্যমে হত্যার ঘটনায় যথাযথ বিচার হবে। সোমবার ঢাকার আদালতে হাজিরা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শাজাহান খানের বক্তব্য
শাজাহান খান বলেন, ‘এটি ঠিক হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মব সৃষ্টি করে মারা হচ্ছে। এই যে মব জাস্টিস করে মানুষ হত্যা করলো…। ১৬২ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী…। এক মাঘে শীত যায় না, এর বিচারও হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এর বিচার হবে না, এটা মনে করো না।’
সাংবাদিকরা যখন দেশ কেমন চলছে জানতে চান, তখন তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা তো দেখছেনই। এক হাতে তালি বাজে না।’ এরপর সাংবাদিকদের খোঁজখবর নেন।
আদালতে হাজিরা ও পরিস্থিতি
সোমবার সকাল ১০টার দিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (Anisul Huq), সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)র উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman) ও শাজাহান খানকে ঢাকার আদালতে তোলা হয়। তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট ছিলো। কাঠগড়ায় তোলার পর পুলিশ তাদের হ্যান্ডকাফ ও হেলমেট খুলে দেন।
আনিসুল হক ও শাজাহান খান একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিচারক এজলাসে প্রবেশ করলে সবাই নিশ্চুপ হয়ে যান। কাঠগড়ার সামনের সারিতে দাঁড়ান আনিসুল হক ও শাজাহান খান; পিছনের সারিতে ছিলেন সালমান এফ রহমান।
সালমান এফ রহমান ছিলেন চুপচাপ এবং নিরিবিলি। তার পরনে ছিল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও পায়ে দুই ফিতার বার্মিজ স্যান্ডেল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
রিমান্ড আদেশ ও শুনানি
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা (Jatrabari Thana) এলাকার সাজেদুর রহমান ওমর (Sazedur Rahman Omar) হত্যা মামলায় শাজাহান খানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম (Mahbub Alam)।
শুনানির সময় শাজাহান খান বলেন, ‘বিজ্ঞ পিপি সাহেব উনি বিএনপি (BNP)র বড় নেতা। ভূতুড়ে মামলায় বারবার আমাদের রিমান্ডে নিচ্ছেন কেন?’
জবাবে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী (Omar Faruk Faruki) বলেন, অভিযুক্তরা সাধারণ আসামি নন। তারা নীতিনির্ধারণী বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এবং মিডিয়ায় বলেছেন আন্দোলনকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো মামলা করিনি, ভুক্তভোগীদের স্বজনরা করেছে। আমরা কেবল শুনানি করি।’
অন্যান্য মামলার অগ্রগতি
একই মামলায় শাজাহান খান, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এছাড়াও:
-
যাত্রাবাড়ীর রিটন উদ্দিন (Riton Uddin) হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু (Kazi Monirul Islam Monu)র এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তবে রাসেল (Russel) হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
-
বদরুল ইসলাম সায়মন (Badrol Islam Saimon) হত্যাচেষ্টা মামলায় রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাইল (Rear Admiral Sohail) এর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
-
আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা (A K M Sarwar Jahan Badsha)কে মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
-
তাজুল ইসলাম (Tajul Islam)কে পল্টন থানার রমজান মিয়া জীবন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলার বিবরণ
সাজেদুর রহমান ওমর ২০২৪ সালের ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। বিকেলে হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৪ আগস্ট মারা যান। এ ঘটনায় ৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় বদরুল ইসলাম সায়মন গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে মামলা দায়ের করেন, যেখানে ২৪৫ জনকে আসামি করা হয়।
একই দিনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রিটন ও রাসেল। এদের হত্যাকাণ্ডে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।