আন্তরাষ্ট্রীয় গুমে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

গুম কমিশন (Goom Commission) প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে যে, বাংলাদেশ (Bangladesh) এবং ভারত (India)—উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আন্তরাষ্ট্রীয় গুম কার্যক্রমে যুক্ত ছিল। সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের আদান-প্রদান করা হতো। এই কর্মকাণ্ডকে ‘আন্তরাষ্ট্রীয় গুমপ্রক্রিয়া’ বলে অভিহিত করেছে কমিশন।

গুমপ্রক্রিয়ার নির্মম চিত্র

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নাগরিককে গুম করে অবৈধভাবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আবার ভারত থেকেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চাহিদা অনুযায়ী সীমান্ত পেরিয়ে এই আদান-প্রদান হতো।

নাম প্রকাশ না করা পাঁচ গুমভুক্তভোগীর জবানবন্দি

কমিশনের প্রতিবেদনে অন্তত পাঁচজন ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতে পাচার হওয়ার পর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এক ভুক্তভোগীর ভাষ্য, ‘আমাকে চোখ বেঁধে ভারতের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়, পরে আবার বাংলাদেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আমাকে বলা হয়, “তুমি মরো, তুমি বাঁচো, আমরা ঠিক করব।”’

আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, তাকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে গিয়ে সেখানে ভারতীয় মুসলমানদের বিষয়ে ভিডিও তৈরি করার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশে এনে র‍্যাব (RAB) হেফাজতে রাখা হয়।

আদালতের অনুমতি ছাড়া অভিযান, লঙ্ঘিত মানবাধিকার

প্রতিবেদনে বলা হয়, গুম, জিজ্ঞাসাবাদ ও স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়ায় কোনো আদালতের অনুমতি বা আইনি মামলার ভিত্তি ছিল না। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে পরিচালিত এই কার্যক্রম ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে।

ফেরত পাঠানো অনেককে ডিজিএফআই (DGFI) ও র‍্যাব হেফাজতে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হয়েছে। কেউ কেউ আবার নিখোঁজ হয়ে যান, যাদের আর খোঁজ মেলেনি।

আইনি কাঠামোর অনুপস্থিতি ও মৌখিক সমঝোতা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গুম ও বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়ায় কোনো লিখিত চুক্তি বা আইনি কাঠামো ছিল না। কেবল মৌখিক সমঝোতার ভিত্তিতেই এসব ঘটেছে। ফলে ভুক্তভোগীদের পরিবার আইনি প্রতিকার তো দূরের কথা, কোনো তথ্যও পায়নি।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের লঙ্ঘন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) এর কাছে ৪ জুন জমা দেওয়া এ প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে নাগরিকদের স্বাধীনতা, বিচারপ্রাপ্তি ও নিরাপত্তার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।