গুম কমিশনের প্রকাশিত দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, র্যাব (RAB)-এর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বেনজীর আহমেদ (Benazir Ahmed) গুমে জড়িত কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করতেন। গুম কমিশনের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, যা সম্প্রতি গণমাধ্যমের জন্য প্রকাশ করা হয়।
গুমে প্রশংসা ও পদোন্নতির সংস্কৃতি
প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন কর্মকর্তা যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army)-তে ব্রিগেডিয়ার (Brigadier) পদে রয়েছেন, তাকে র্যাবে দায়িত্ব পালনের সময় বেনজীর ‘উচ্চমানের নেতৃত্ব’ এবং ‘স্ব-উদ্যোগে’ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রশংসা করেন। সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যদিও তার বিরুদ্ধে গুমে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
গুম ছিল প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
‘প্রশ্রয়মূলক প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি’ শিরোনামের এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে, গুমের ঘটনাগুলো একক বা বিচ্ছিন্ন কারও কর্মকাণ্ড ছিল না। বরং গোটা প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অজান্তে এমন ঘটনা ঘটার সুযোগ খুবই কম। উল্লেখযোগ্যভাবে, কোনো নথিতে “গুম” শব্দটি উল্লেখ না থাকলেও অপরাধ ব্যাপক এবং বহুল আলোচিত ছিল।
কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই ধরনের গুম ঘটনাগুলোতে শুধু দেশের ভেতরের নয়, আন্তর্জাতিক অংশীদারদেরও ভূমিকা ছিল এবং এসব অপরাধ বহুক্ষেত্রে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের (Regime Change) পরও দায়মুক্তির সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে এবং পুরনো কাঠামো এখনও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের চিত্র
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র শাসনামলে শিক্ষার্থী, তরুণসহ নানা বয়সী নাগরিকদের গুম করার নানা ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যেসব ভাগ্যবান ব্যক্তি বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রাপ্ত তথ্য ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। ডিজিএফআই (DGFI), র্যাব এবং সিটিটিসি (CTTC)-র গোপন আটকস্থলগুলোতে কীভাবে তাদের রাখা হতো, কী নির্যাতন চালানো হতো, তার বর্ণনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
অপরাধে অংশ নেয়া অনেকেই কাজ করেছেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গুম ঘটনায় অংশগ্রহণ করা অনেক কর্মকর্তা ও অধস্তন কর্মচারী ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব তথ্য গুম কমিশনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সময় তাঁরা প্রকাশ করেন।