বিএনপির সম্মেলনে কারারুদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে শোডাউন ও স্লোগান

ফরিদপুর (Faridpur) জেলার সালথা (Saltha) উপজেলায় আয়োজিত বিএনপি (BNP)’র কর্মী সম্মেলনে কারাবন্দী আওয়ামী লীগ (Awami League) নেতা মো. নুরুদ্দীন মাতুব্বরের পক্ষে শোডাউন এবং স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় সৃষ্ট রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও প্রশ্নবোধক পরিস্থিতি স্থানীয় পর্যায়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

কারারুদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে শোডাউন

গত রবিবার (২২ জুন) দুপুরে সালথা উপজেলা পরিষদের মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে গট্টি ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তত দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল, নসিমন, ভ্যান ও ইজিবাইক নিয়ে শোভাযাত্রা করে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুদ্দীন মাতুব্বরের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন নুরুদ্দীনের ভাই ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মুনছুর মাতুব্বর।

পরিচিতি ও মামলার বিবরণ

নুরুদ্দীন মাতুব্বর (৫৫) সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং তার ভাই মুনছুর মাতুব্বর (৪৫) শ্রমিক লীগের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা দুজনেই গট্টি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নুরুদ্দীনের বিরুদ্ধে থানায় হামলা, অস্ত্র লুট ও বিস্ফোরক আইনে তিনটি মামলা হয়। সালথা থানা পুলিশ গত ২৯ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তিনি বর্তমানে ফরিদপুর জেল হাজতে রয়েছেন।

ব্যানারে বিএনপি নেতাদের ছবি ও বার্তা

শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত ব্যানারে ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman), বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia), তারেক রহমান (Tarique Rahman) ও ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত ওবায়দুর রহমানের ছবি। পাশাপাশি ছিল নুরুদ্দীন ও শামা ওবায়েদ (Shama Obaid) এর ছবি এবং লেখা ছিল—“বার বার নির্যাতিত বিএনপি নেতা মো. নুরুদ্দীন মাতুব্বরের পক্ষ থেকে শামা আপার হাতকে শক্তিশালী করতে ২২ জুন সালথা উপজেলা বিএনপির কর্মী সম্মেলন সফল হোক।”

ভাইয়ের বক্তব্য ও রাজনৈতিক বিভ্রান্তি

মুনছুর মাতুব্বর দাবি করেন, তার ভাই আওয়ামী লীগ নন, বরং আজীবন বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন। তিনি বলেন, “নুরুদ্দীন উপজেলা আওয়ামী লীগের পদে নেই। তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন।” তবে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী এবং সালথা থানার ওসি আতাউর রহমান এ দাবিকে অস্বীকার করে নিশ্চিত করেন, নুরুদ্দীন আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

বিএনপির অভিযোগ ও পাল্টা বক্তব্য

সালথা উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নুরুদ্দীনের পক্ষে শোডাউন আয়োজনের মদদ দেন নগরকান্দা (Nagarkanda) উপজেলার বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও লস্কারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (Laskardia Union Parishad) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার (Habibur Rahman Babul Talukder)। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নুরুদ্দীনকে বিএনপিতে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এসব প্রতিহিংসার রাজনীতি।”

জেলা বিএনপির অবস্থান

সালথা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার বলেন, “সালথা বিএনপির এক বহিষ্কৃত নেতার সহায়তায় এ ঘটনা ঘটেছে।”
এদিকে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া (A K M Kibria) বলেন, “আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বিএনপিতে প্রবেশের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে এদের প্রতিহত করা হবে।”