ভোলার দৌলতখান ভূমি অফিসে ঘুষচক্র, পেশকারের বিরুদ্ধে ভিডিওসহ অভিযোগ

ভোলা (Bhola) জেলার দৌলতখান (Daulatkhan) উপজেলা ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে একটি ঘুষচক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন অফিসের নাজির আনোয়ার হোসেন (Anwar Hossain) এবং পেশকার আব্দুল খালেক (Abdul Khaleq)। দালালদের সহায়তায় তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমির নামজারি ও অন্যান্য সেবা প্রদানের নামে ঘুষ গ্রহণ করে আসছেন বলে জানা গেছে।

প্রকাশিত ভিডিও ও দালালদের সক্রিয়তা

বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও, যেখানে দেখা যায়—এক নারী সেবাগ্রহীতা পেশকার খালেককে কয়েকটি হাজার টাকার নোট দিচ্ছেন, এবং তিনি তা গুনছেন। এই নারীর নাম শাহনাজ (Shahnaz) এবং তিনি দৌলতখানের হাজিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। জানা যায়, গত রোববার তিনি নামজারির কাজ করতে গিয়ে এই টাকা প্রদান করেন।

প্রতিদিন অফিস কক্ষে খালেকের পাশে ৩-৪ জন দালাল (Shahidul Islam) অবস্থান করেন। শহীদুল জানান, তিনি আগে নাজির আনোয়ারের মাধ্যমে কাজ করতেন, তবে বেশি ঘুষ নেওয়ার কারণে এখন খালেকের মাধ্যমে কাজ করাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, পেশকার খালেকের নিজস্ব কয়েকজন দালাল রয়েছে, যারা নিয়মিতভাবে খালেকের টেবিল ঘিরে বসে থাকে।

কর্মকর্তাদের অবস্থান ও পুরনো বিতর্ক

আব্দুল খালেক ২০১৫ সাল থেকে এই অফিসে কর্মরত, আর আনোয়ার হোসেন ২০০৪ সাল থেকে এখানে আছেন। যদিও ২০২৩ সালে নাজির আনোয়ারকে বদলি করা হয়েছিল, তবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার দৌলতখানে ফিরে আসেন।

২০২২ সালে একটি জমি বিরোধের তদন্তে ভোলার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রায়হান উজ্জামান (Raihan Uzzaman) তদন্তে গেলে, ডিসি চলে যাওয়ার পর আনোয়ার এক পক্ষের হয়ে অভিযোগকারীদের ওপর হামলা করেন বলে অভিযোগ উঠে। এরপর তাকে মনপুরা বদলি করা হলেও তিনি আবার ফিরে আসেন।

সেবাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতা

নুরে আলম (Nure Alam) নামের এক সেবাগ্রহীতা জানান, দুই মাস আগে ছয় হাজার টাকা দিয়ে নামজারির আবেদন করেন। পরবর্তীতে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। এখন নাজির আনোয়ার তাকে এসি ল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন, কিন্তু আর কোনো সহযোগিতা করছেন না।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

অভিযোগ অস্বীকার করে পেশকার আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। আমি নামজারির টাকা নিই না।’ নাজির আনোয়ার হোসেনও ঘুষ গ্রহণ এবং মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

দৌলতখান এসি ল্যান্ড মুন্নী ইসলাম (Munni Islam) জানান, পেশকার খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান (Azad Jahan) বলেন, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।