৫ আগস্টের পর থেকে দেশে এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে ‘মব জাস্টিস’ (Mob Justice)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সম্প্রতি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা (KM Nurul Huda)-কে জনতার হাতে লাঞ্ছনার ঘটনার পর মব জাস্টিস ইস্যুতে সরকার, আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক আমলা ও আওয়ামী লীগ (Awami League) নেতারা রয়েছেন আতঙ্কে।
সাবেক সিইসিকে লাঞ্ছনা: প্রশাসনের বিবৃতি
গত ২২ জুন রাজধানীর বাসভবন থেকে কে এম নুরুল হুদাকে আটক করা হয়। আটক করার আগে তার বাসায় ঢুকে একদল লোক তাকে লাঞ্ছিত করে এবং ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে। এক লাইভে দেখা যায়, তার গলায় জুতার মালা পরানো হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় (Chief Advisor’s Office) থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, “গ্রেপ্তারের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। এটি বেআইনি, আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং ফৌজদারি অপরাধ।”
উল্লেখ করা হয়, ওই ঘটনায় উত্তরা থানা পুলিশ (Uttara Police) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
‘মব’ আতঙ্কে সাবেক আমলা ও রাজনীতিকেরা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক সচিব বলেন, “আমরা সরকারের কর্মচারী ছিলাম। হুকুম পালন করেছি। চাকরি শেষে যদি এমনভাবে হেয় হতে হয়, তবে সম্মান বলে কিছু থাকে না। এখন আর আইনের বিচারে না গিয়ে, আগে মব জাস্টিসে বিচার হচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।”
একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘গড়পড়তা’ নেতারাও আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকে আত্মগোপনে, কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “আমরা কোথায় আছি বলতে চাই না। কিন্তু মব জাস্টিসের নামে যেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে, তাতে কেউ নিরাপদ নই।”
সরকারের অবস্থান ও জিরো টলারেন্স নীতি
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ (Fayez Ahmad) বলেন, “যত ক্ষোভই থাকুক, মব জাস্টিস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা মব গঠন করে অপরাধ করছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে।”
বিএনপি ও অন্যান্য দলের অবস্থান
বিএনপি (BNP)-র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed) বলেন, “আমরা আইনের শাসনের পক্ষে। মব কালচার আমরা সমর্থন করি না। যার দোষ আছে, তার বিচার হোক আদালতে।”
রুহুল কবীর রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi) বলেন, “সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা ফ্যাসিবাদের অংশ, কিন্তু মব জাস্টিস কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।”
মবের উৎপত্তি ও দায় কার?
গণঅধিকার পরিষদ (Gonoadhikar Parishad)-এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান (Rashed Khan) প্রশ্ন তোলেন, “সরকার নিজেই কি মব তৈরি করছে না?” তিনি বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় সমাজে মবোক্রেসির বিস্তার ঘটছে। এর দায় সরকারের।”