রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ পর্যবেক্ষক ডা. জায়েদ উর রহমান (Dr. Zayed Ur Rahman) বলেছেন, “যেই জিতুক না কেন, যদি সে নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তাহলে সে হয়ে উঠবে আরেকজন শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)।”
ব্যক্তি নয়, সমস্যাটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে ডা. জায়েদ বলেন, “মানুষ শুধু শেখ হাসিনার পতনের জন্য রাস্তায় নামেনি। মানুষ একটি ভাঙা রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। সমস্যাটা ব্যক্তি শেখ হাসিনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—সমস্যা হলো ম্যান্ডেটহীনভাবে ক্ষমতায় থাকার সংস্কৃতি।”
নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকার মানেই ‘নতুন হাসিনা’
ডা. জায়েদ আরও বলেন, “ভবিষ্যতে যদি বিএনপি (BNP) বা জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) ক্ষমতায় আসে এবং তারা যদি জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া টিকে থাকতে চায়, তাহলে তারাও হয়ে উঠবে আরেকজন শেখ হাসিনা।”
তার ভাষায়, “শেখ হাসিনা সাংবিধানিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। ভোটের আগের রাতে ভোট হয়ে যায়—এটা তো কোনো সংবিধানে লেখা নেই। এক্সট্রা-জুডিশিয়াল কিলিংয়ের কোনো বৈধতা নেই, অথচ সেগুলোই এখন প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা।”
পুরনো কাঠামোর মধ্যেই নতুন দলের যাত্রা
তিনি বলেন, “নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হলেও তারা সেই পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংস্কৃতি পরিবর্তন কোনো কঠোর হাতুড়ির কাজ নয়। এটা কাঠের ছোট হাতুড়ি দিয়ে ধাপে ধাপে, ধৈর্যের সঙ্গে পরিবর্তন আনতে হয়।”
সমাজ বদলাতে হলে প্রাকৃতিক রূপান্তর দরকার
চীনের উদাহরণ টেনে ডা. জায়েদ বলেন, “মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে চীনে সংস্কৃতি পরিবর্তনের যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, তা এক পর্যায়ে বিপর্যয়ে গিয়ে পৌঁছায়। আমাদের দেশেও যদি সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটা টেকসই হবে না। সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে সেটা হতে হবে স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য উপায়ে।”
এই আন্দোলন শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়
তার মতে, “মানুষ শুধু নেতৃত্ব বদল চায় না, তারা চায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি। শেখ হাসিনার পতনের চাইতেও বড় বিষয় হচ্ছে সেই ব্যবস্থার পতন, যা তার সময়কালে গড়ে উঠেছে।”
সবশেষে ডা. জায়েদ উর রহমান বলেন, “যে কোনো দল যদি নির্বাচন বা জনগণের অনুমোদন ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে চায়, জনগণ সেটাও প্রত্যাখ্যান করবে। এটাই এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা।”