মার্কা এখন রাজনৈতিক প্রতীক নয়, নতুন বিনোদনের ব্র্যান্ডিং: মন্তব্য জিল্লুর রহমানের

সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান (Zillur Rahman) মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতীক বা ‘মার্কা’ এখন আর কেবল নির্বাচন কেন্দ্রিক চিহ্ন নয়—এটি হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক বিনোদনের নতুন ব্র্যান্ড। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজনীতি এখন অনেকটা “ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ের গ্লামারাস খেলা”।

প্রতীকের শক্তি ও ব্র্যান্ডিং

তিনি উদাহরণ দেন এক কমিশনার প্রার্থীর, যিনি কাঁঠাল (Kathal) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ভোটের সকালে ঘরে ঘরে কাঁঠাল মুড়ি বিলি করেছেন। এই ‘খাবারের মাধ্যমে নির্বাচনী আর.ও.আই’ এর বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “হাতি মার্কা প্রার্থী তো কারো ঘরে হাতি পাঠাতে পারবেন না।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party) চাচ্ছে শাপলা (Shapla) প্রতীক, সঙ্গে রয়েছে কলম ও মোবাইলও। তবে জনদৃষ্টি আটকে আছে কেবল শাপলায়। অতীতে নাগরিক ঐক্য (Nagorik Oikya) শাপলা চাইলেও তা পায়নি। আজ তা নিয়ে চলছে নতুন বিতর্ক—কেউ বলছেন এটি বিজেপি (BJP)–র পদ্ম প্রতীকের অনুসরণ, আবার কেউ বলছেন এটি জাতীয় ফুল।

প্রতীক নিয়ে বৈশ্বিক তুলনা

যুক্তরাষ্ট্র (United States) ও ভারত (India)–এর উদাহরণ টেনে জিল্লুর রহমান বলেন, রিপাবলিকানদের হাতি, ডেমোক্র্যাটদের গাধা প্রতীক এসেছে ব্যঙ্গচিত্র থেকে। ভারতের ক্ষেত্রে প্রতীক হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ব্র্যান্ড—যেমন পদ্ম, পাঞ্জা বা চোরাফুল।

বাস্তবতা ও রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিং

বাংলাদেশে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন (Election Commission)–এর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু অধিকাংশ দলের নেই সুসংগঠিত অফিস। অনেকে বন্ধ দোকান বা রেস্তোরাঁর পাশেই ব্যানার ঝুলিয়ে রাজনৈতিক দলের অফিস চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “মার্কা এখন অনেকটা ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারের মতো—বাস্তবের চেয়ে বেশি ইমেজ নির্মাণ।” কেউ বন্দুক মার্কা পেয়ে উল্টো প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন—এটা একনলা না দু’নলা?

জিল্লুর রহমানের ভাষায়, “গণতন্ত্র এখন অনেকটা আইটেম সংয়ের মত শিরোনামে থাকলেও গল্পে তার ভূমিকা কম।”

দলের ছড়াছড়ি ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

তিনি বলেন, বড় দলের বাইরে তৈরি হচ্ছে ইনসাফ পার্টি, পাঠা পার্টি, আজাদী পার্টি, শান্তির পার্টির মতো নামধারী দল। অনেকেই জানেন না তাদের কমিটিতে কারা আছে, মহাসচিব কে, এমনকি কী প্রতীক চাইছেন তাও স্পষ্ট নয়। কেউ বলছেন, এখন রাজনীতির যুগ চলছে, যেমন এক সময় এনজিও খোলার হিড়িক ছিল।

মার্কার গুরুত্ব ও সতর্কতা

জিল্লুর রহমান শেষ করেন এক সতর্কবার্তায়: “মার্কা দিয়ে শুরু হলেও যেন শেষটা কেবল প্রতীকে আটকে না যায়। জনগণের মধ্যে যদি একবার বিশ্বাস তৈরি করা যায়, সেটিই হবে রাজনীতির আসল ব্র্যান্ড। এখন দেখা যাক কে এই মার্কা যুদ্ধে টিকে থাকেন।”