অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)–কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam)। শনিবার রাতের প্রথম প্রহরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই শুভেচ্ছা জানান।
“আপনার সঙ্গে কাজ করা এক বিরাট সম্মানের বিষয়”— প্রেস সচিব
পোস্টে শফিকুল আলম লেখেন—“শুভ জন্মদিন স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য এক বিরাট সম্মানের বিষয়।”
পোস্টের সঙ্গে সংযুক্ত করে তিনি তার ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারির একটি পুরোনো লেখা পুনরায় শেয়ার করেন, যেখানে ড. ইউনূসকে ঘিরে একটি বিশ্লেষণধর্মী পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
ড. ইউনূস: নীরবতা ও সহনশীলতার প্রতীক
পোস্টে বলা হয়, “অধ্যাপক ইউনূস কখনো আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার দেন না। তবে দেখা করলে যে কেউ তার সঙ্গে পৃথিবীর যেকোনো বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করতে পারেন।” উল্লেখ করা হয়, তিনি তার বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বলেন না— বরং গ্রিক স্টোয়িক দার্শনিকদের মতো করে সবকিছু সহ্য করেন।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৭০টির বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি দুর্নীতির মামলাও আছে। ইতোমধ্যেই তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং তিনি জামিনে রয়েছেন। তবে, তাকে কতদিন জামিনে রাখা যাবে, সে বিষয়ে তার আইনজীবীরাও নিশ্চিত নন।
নায়কোচিত উপস্থিতি ও অনন্য ব্যাখ্যা ক্ষমতা
প্রেস সচিবের ভাষায়, “অধ্যাপক ইউনূস আমাদের সময়ের একজন নায়ক। তার সবচেয়ে অনন্য গুণ—জটিল অর্থনৈতিক তত্ত্ব বা ভূরাজনৈতিক বিষয়কেও সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারেন।” এ গুণটিই তাকে আলাদা করেছে অন্যান্য বাংলাদেশি (Bangladeshi) বুদ্ধিজীবীদের থেকে, যারা দেশ–বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করলেও এমন ব্যাখ্যা ক্ষমতায় পিছিয়ে।
ইউনূস সেন্টারে নিরব সংকেত
মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে (Mirpur Zoo Road) অবস্থিত ইউনূস সেন্টার (Yunus Centre) নিয়ে পোস্টে বলা হয়, “এখন যেন সেখানে একটি হাল ছেড়ে দেওয়ার পরিবেশ বিরাজ করছে।” সেখানে এখন খুব কম মানুষই দেখা করতে আসেন, কারণ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে পরিণতি নিয়ে শঙ্কা থাকে।
দেশত্যাগে অনীহা ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সুইজারল্যান্ডে (Switzerland) তার জন্য জমি ও অফিস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যেখানে একটি নতুন ইউনূস সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু তিনি ইউরোপ (Europe) বা বিদেশে চলে যেতে নারাজ— কারণ বাংলাদেশ–ই তার ভালোবাসার দেশ।
তার প্রথম বিবাহ ছিল এক মার্কিন নারীর সঙ্গে, যা পরবর্তীতে ভেঙে যায় মূলত বাংলাদেশে থেকেই নিজের চিন্তাভাবনা ও কাজ এগিয়ে নেওয়ার কারণে।
থেমে নেই স্বপ্ন, থেমে আছে অনুমোদন
ইউনূস সেন্টারের সূত্রে জানা গেছে, তিনি বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫০০ বেডের আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। অর্থ ও জমি থাকা সত্ত্বেও, বছরের পর বছর অনুমোদনের অভাবে তিনি এগোতে পারছেন না।
তার প্রতিষ্ঠিত নার্সিং ইনস্টিটিউট দেশের সেরা নার্স তৈরির কাজ করছে, কিন্তু অনুমোদন না থাকায় সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না।
শেষে প্রেস সচিব লেখেন, “আমি ড. ইউনূসের মতো দেশপ্রেমিক মানুষ আর দেখিনি। কিন্তু তিনি কখনো নিজ মুখে দেশপ্রেম নিয়ে কিছু বলেন না— শুধু একটি প্রশস্ত হাসি দিয়ে যান।”