জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party) বা এনসিপি এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (Sarjis Alam) বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনেকের মধ্যে তিনি প্রয়োজনীয় সাহসিকতা ও দক্ষতা দেখতে পাননি। ফলে মাঠপর্যায়ে তাদের কর্তৃত্ব কমে গিয়ে তা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে চলে গেছে। শুক্রবার রাতে যমুনা টেলিভিশন (Jamuna Television) এর এক টকশোতে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রোকসানা আনজুমান নিকোল এবং আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জি নাইন (G-Nine) এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ (Dr. Sakhawat Hossain Saynth)।
উপদেষ্টাদের সাহসের অভাব এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা
সারজিস বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় অর্ধেক সদস্য প্রত্যাশিত সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও কার্যকর নেতৃত্ব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, “বরং তারা শুধুমাত্র রুটিন কাজ করেছেন, সেটাও ধীরগতিতে। এদের মধ্যে অনেকেই দক্ষ ও সৎ হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা নিজেদের দায়িত্বে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি।”
দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক
৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ও ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’ এবং ৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, “৮ আগস্ট আমাদের পরাজয় দিবস। দ্বিতীয় স্বাধীনতা নষ্টের ছাড় দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, এই সরকার গঠনের সময় এনসিপি সরাসরি নিয়োগদাতা ছিল না, বরং এটি ছিল সম্মিলিত আন্দোলনের ফল। তিনি দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এর সুপারিশে এসেছেন।
রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক দুর্নীতি
সারজিস বলেন, উপদেষ্টারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি (BNP) তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, “প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে বিএনপির রাজনীতির ভিত্তিতে এডহক কমিটি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ (Awami League) যেমন প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট করেছিল, এখন তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসনে অনেক কর্মকর্তা আগের মতো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন, কারণ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মিথ্যা মামলা সাজিয়ে রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িকভাবে সুবিধা আদায়ের অভিযোগও আনেন তিনি।
এনসিপির ভেতরের মতপার্থক্য
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণার বিরোধিতা করে এনসিপির অপর দুই মুখ্য সংগঠক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “৮ আগস্ট পরাজয় দিবস। ডিপ স্টেট, রাজনৈতিক দল ও কথিত সুশীল সমাজ আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
এ বিষয়ে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ডা. সাখাওয়াত সায়ন্থ বলেন, “এটা বিএনপির জন্য বড় ইস্যু নয়। তারা গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সারজিস একসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করতেন, আজ তিনি উল্টো বলছেন। হয়ত এনসিপির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলেই এখন এই বক্তব্য।”
এনসিপির ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের করণীয়
সাখাওয়াত সায়ন্থ মন্তব্য করেন, “এনসিপি যদি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা করতে পারতো, তাহলে পুরনো দলগুলো চাপ অনুভব করতো। কিন্তু এনসিপি সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
সারজিস স্বীকার করেন, “আমাদের অনভিজ্ঞতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। হয়তো আমাদের উচিত ছিল বিপ্লবী বা জাতীয় সরকার গঠন করা, যারা সরাসরি অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত ছিল।”