চট্টগ্রামে জনতার হাতে আটক হয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ হলেন হাছান মাহমুদের সহযোগী আরজু সিকদার

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (Bangladesh Awami League) এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের (Hasan Mahmud) ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের কুখ্যাত ক্যাডার শামশুদ্দোহা সিকদার আরজু (Shamsuddoha Sikdar Arju)-কে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর সরাইপাড়া (Saraipara) এলাকার ইবতেদায়ী মাদরাসার সামনে থেকে তাকে আটক করে স্থানীয় জনতা পাহাড়তলী থানা (Pahartali Police Station)-তে হস্তান্তর করে।

পুলিশের কাছে হস্তান্তর ও মামলার তথ্য

পাহাড়তলী থানার ওসি মো. বাবুল আজাদ জানান, গভীর রাতে স্থানীয়রা আরজুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে কোতোয়ালি থানায় (Kotwali Police Station) একাধিক মামলা থাকায় তাকে সেখানে হস্তান্তর করা হয়। মামলার সংখ্যা ও অভিযোগ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম, তবে মামলাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

এছাড়া, রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার (Rangunia Model Police Station) ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার নিশ্চিত করেছেন, আরজুর বিরুদ্ধে একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

আরজুর রাজনৈতিক পরিচিতি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

আরজু সিকদার দুই মেয়াদে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগ (Rangunia Upazila Jubo League) এর সভাপতি ছিলেন এবং সর্বশেষ উত্তর জেলা যুবলীগের (North District Jubo League) সিনিয়র সহসভাপতি পদে মনোনীত হন। রাজনীতিতে তার বিভিন্ন বক্তব্য ও হুমকি সামাজিক মাধ্যমে সমালোচিত হয়।

পারুয়া ইউনিয়নের এক সম্মেলনে তিনি বিএনপি (BNP) নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ‘পুলিশ সেজে ঘরে ঘরে অভিযান’ চালানোর হুমকি দেন, যা ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। এছাড়া, রাঙ্গুনিয়াকে ‘রাউজান (Raozan) স্টাইলে’ চালানোর ঘোষণা দেন, যা স্থানীয় জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

অতীত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অপরাধের ইতিহাস

আরজুর ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯০ সালে রাঙ্গুনিয়া কলেজ (Rangunia College) ও আশপাশের এলাকায় বোমাবাজি, চাঁদাবাজি এবং ধর্ষণের মতো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এক সময় রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী হাসিনাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে বিয়ে করেন তিনি।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (Salauddin Quader Chowdhury)-কে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

হাছান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কর্মকাণ্ড

২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে আরজু তার ঘনিষ্ঠ ক্যাডার হয়ে উঠে। এরপর উপজেলা ছাত্রলীগের রাসেল রাসু, বি কে লিটন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন প্রমুখকে নিয়ে একটি ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে, যারা চট্টগ্রামে দাপট চালায়।

২০১৭ সালের ২১ জুন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) এর নেতৃত্বে দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণে রাঙামাটিতে যাওয়ার সময়, ইছাখালীতে তার গাড়িবহরে হামলার অভিযোগও রয়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। এতে বিএনপি নেতারা আহত হন, যার মধ্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) অন্যতম।

এই ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader) এ ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করলেও, তৎকালীন প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক পটভূমি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বর্তমান সরকার পতনের পর হাছান মাহমুদ এবং আরজুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। এরপর থেকেই আরজু আত্মগোপনে চলে যান এবং হাছান মাহমুদ বিদেশে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি বেলজিয়ামে (Belgium) পরিবারসহ অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।