বাংলাদেশের বিমানবন্দর প্রকল্পে অনিয়ম, রাষ্ট্রদূতের ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বেগ

বাংলাদেশ (Bangladesh)-এর বিমানবন্দরে অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্পে সংযুক্ত আরব আমিরাত (United Arab Emirates)-এর রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আলহমুদি (Abdullah Ali Al-Hamoudi) সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মিডল ইস্ট আই (Middle East Eye) প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রদূতের মালিকানাধীন একটি কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে করা এ চুক্তির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা নিয়েছে।

রাষ্ট্রদূতের ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব ও কূটনৈতিক লঙ্ঘন

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত আলহমুদি আইডেন্টিমা (Identima) নামের দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানির ৩৪ শতাংশ মালিক। কোম্পানিটি ২০২১ সালে গঠিত হয় এবং বিমানবন্দর তথ্য ব্যবস্থাপনায় সাব-কন্ট্রাক্ট হিসেবে কাজ পায়। রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব গ্রহণ ভিয়েনা কনভেনশন (Vienna Convention) অনুযায়ী কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও প্রটোকলের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রকল্পের পেছনের আর্থিক অনিয়ম

২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইমিরেটস টেকনোলজি সলিউশনস (Emirates Technology Solutions – Etek) মূল দায়িত্ব পায়। পরবর্তীতে Etek এর বড় অংশের কাজ দিয়ে দেয় Identima-কে, যার ম্যানেজার ও অন্যতম মালিক স্বয়ং রাষ্ট্রদূত আলহমুদি।

আইডেন্টিমার বাকি মালিকদের মধ্যে রয়েছেন দুই বাংলাদেশি নাগরিক—মুনতাসির বিল্লাহ শাহরিয়ার (Muntasir Billah Shahriar) ও সাজেদ আহমেদ সামির (Sajed Ahmed Samir)। শাহরিয়ারকে সাবেক সরকারদলীয় ঘনিষ্ঠ বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এমনকি তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র সঙ্গে বৈঠকের ছবিও সংযুক্ত রয়েছে।

সেবা চার্জ এবং যাত্রীদের উপর প্রভাব

এই প্রকল্পের আওতায় প্রথমে প্রতি যাত্রী ৬.৫০ ডলার করে চার্জ নির্ধারণ করা হয়, যা পরবর্তীতে ৪ ডলারে নামানো হয়। অথচ আইসিএও (ICAO) সুপারিশ করে ৩.৫০ ডলারের। এমনকি সিটা (SITA) সংযুক্ত আরব আমিরাতে একই সেবার জন্য ১.৫০ ডলার নেয়। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা প্রবাসী শ্রমিকসহ সাধারণ যাত্রীদের ওপর চাপতে পারে বলে মনে করছে বেবিচক (CAAB)।

টিআইবির উদ্বেগ ও মন্তব্য

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (Transparency International Bangladesh – TIB)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান (Dr. Iftekharuzzaman) এই চুক্তিকে ‘স্বার্থের সংঘাত ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “একজন রাষ্ট্রদূতের ব্যবসায়িক অংশগ্রহণ কেবল কূটনৈতিক প্রটোকলের লঙ্ঘন নয়, নৈতিকতারও পরিপন্থী। তার বিনিয়োগের উৎস ও সরকারের অনুমোদনের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”

প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়

২০২১ সালের অক্টোবরেই Etek এবং Identima-এর মধ্যে সমঝোতা হয় এবং সেই নথিতে স্বাক্ষর করেন আলহমুদি নিজেই। এই প্রকল্পের ধীরগতির অভিযোগে CAAB চলতি বছরের শুরুতে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। এদিকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আমিরাতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে রাষ্ট্রদূতের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ্যে আসায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।