আ হ ম মুস্তফা কামাল (A H M Mustafa Kamal), যিনি লোটাস কামাল নামে পরিচিত, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে বিলাসবহুল জীবন গড়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের শাসনামলে তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, অথচ অফিস করেছেন মাত্র ৭২ দিন।
বিদেশে সম্পদের পাহাড়
সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশে রয়েছে লোটাস কামালের বিপুল সম্পদ। শুধু দুবাই (Dubai)তেই তাঁর এবং পরিবারের নামে রয়েছে ১৮টি নিবন্ধিত কোম্পানি ও বাড়িঘর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) ইউ ট্যাক্স অবসারভেটরি ২০২২ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দুবাইয়ে ৫৩২ জন বাংলাদেশির আবাসন মালিকানার তালিকায় কামাল পরিবারের নামও রয়েছে।
অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল এবং কাশমেরি কামালের সম্পদ
‘অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি নির্মাণ সংস্থা সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিবন্ধিত, যার অন্যতম মালিক কাশমেরি কামাল (Kashmery Kamal)। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ছয়টি আবাসন প্রকল্প পরিচালনা করছে যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। দুবাইয়ের পাম বীজ এলাকায় রয়েছে কাশমেরি ও তাঁর মেয়ে নাফিসা কামাল (Nafisa Kamal)-এর বিলাসবহুল বাংলো।
নাফিসা কামালের ব্যবসায়িক বিস্তার
নাফিসা কামাল এনকে স্পোর্টস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চ্যারিটি এবং ক্রীড়াভিত্তিক ইভেন্ট আয়োজন করেন। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan)। এই প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। এছাড়া ফ্যাশন হাউস নামে একক মালিকানাধীন একটি পোশাক আমদানি ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার শাখা রয়েছে দুবাই ও শারজাহ (Sharjah) শহরে। কসমেটিকস ব্যবসাও শুরু করতে যাচ্ছেন নাফিসা কামাল, যার উদ্বোধন ডিসেম্বর ২০২৫ সালে হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে ও পশ্চিমা দেশে বিনিয়োগ
কাতার (Qatar) বিশ্বকাপ ২০২২-এর সময় নাফিসা কামাল সেখানে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ করেন এবং বর্তমানে কাতারে নিবন্ধিত ব্যবসায়ী হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সৌদি আরবে (Saudi Arabia) একটি শপিং মল নির্মাণ এবং ফুটবল ক্লাবের শেয়ার কেনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
লন্ডন, কানাডা ও সুইস ব্যাংকে লুটের টাকা
লোটাস কামাল লন্ডন (London) ঠিকানা ব্যবহার করে সেখানে একটি বাড়ি কিনেছেন, যেখানে তাঁর ছোট মেয়ে বাস করেন। তাঁর মেয়ের নামে একটি ব্যবসাও রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি সুইস ব্যাংকে তাঁর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব
প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু (Vanuatu) সরকারের ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ স্কিমের আওতায় আ হ ম মুস্তফা কামাল নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। এতে করে তিনি এখন ১৩০টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারেন।
উপসংহার
২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর থেকেই অর্থ পাচার শুরু করেন লোটাস কামাল। বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের পাহাড়। অথচ এই দুর্নীতির দায়ে এখনো তাঁকে জবাবদিহি করতে হয়নি। জনগণের অর্থে গড়া এই সাম্রাজ্যের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতার ছায়া ও দুর্নীতির জাল।