বিএনপি (BNP) জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫৮ সদস্যের একটি উদযাপন কমিটি গঠন করেছে। তবে এই কমিটিতে আওয়ামী লীগ (Awami League) ঘরানার ও অতীতে ছাত্রলীগে জড়িত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি ঘিরে দলে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপেক্ষা করে ‘অচেনা’ ও ‘ভোল পাল্টানো’দের প্রাধান্য দেওয়ায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
উদযাপন কমিটিতে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের স্থান
৫৮ সদস্যের মূল কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi) ও সদস্য সচিব মোর্শেদ হাসান খান (Morshed Hasan Khan)। মূল কমিটির বাইরে আরও একাধিক উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন, ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ও মিডিয়া উপ-কমিটি। তবে এসব কমিটিতে বিএনপির চেনা ও মাঠের কর্মীরা নয়, বরং অপরিচিত বা ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
আলোচিত নাম: এহসান মাহমুদের অন্তর্ভুক্তি
এহসান মাহমুদ (Ehsan Mahmud) নামে একজন ব্যক্তি যিনি অতীতে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাকে শুধুমাত্র যোগাযোগ উপ-কমিটির সদস্য সচিব নয়, মূল কমিটিতেও জায়গা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন, তিনি নানা নেতার কাছে গিয়ে সম্পর্ক গড়ে এই পদ অর্জন করেছেন। অথচ মাঠের অনেক পরীক্ষিত নেতা–যেমন ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)– তাদের নিচের দিকে রাখা হয়েছে।
বিতর্কিত সদস্যদের পরিচয় ফাঁস
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য আরিফা সুলতানা রুমা (Arifa Sultana Ruma) ও ইডেন কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রেহানা আক্তার শিরিন ফেসবুকে অভিযোগ করেছেন, চয়ন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা (Chayan Faria Islam Meghla) নামে এক তরুণী যিনি অতীতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, তাকেও অভ্যর্থনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ ও প্রশ্ন
অনেক ত্যাগী নেতা অভিযোগ করছেন, তেলবাজ ও সুবিধাবাদীদের প্রাধান্য দিয়ে প্রকৃত আন্দোলনকারীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। আমিরুল ইসলাম কাগজী (Amirul Islam Kagzi), সাঈদ খান (Saeed Khan) সহ একাধিক নতুন মুখের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও চলছে আলোচনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “গত এক মাস ধরে এই এহসান মাহমুদ নামের লোকটাকে দেখছি। নেতাদের কাউকে সালাম দিয়ে, পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে যদি দায়িত্ব পাওয়া যায় তাহলে আর মিছিল-মিটিং করে লাভ কী?”
উপ-কমিটির তালিকা
- অভ্যর্থনা উপ-কমিটি: আহ্বায়ক হাবিব উন নবী খান সোহেল (Habib-un-Nabi Khan Sohel), সদস্য সচিব শামা ওবায়েদ (Shama Obaed)।
- আপ্যায়ন উপ-কমিটি: আহ্বায়ক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স (Syed Emran Saleh Prince), সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম নয়ন (Nurul Islam Nayan)।
- ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি: আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (Shahid Uddin Chowdhury Annie), সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন (Abdullah Al Mamun)।
- সবুজ পল্লবে স্মৃতি অম্লান কমিটি: আহ্বায়ক হাসান জারিফ তুহিন (Hasan Zarif Tuhin), সদস্য সচিব আতিকুর রহমান রুমন (Atiqur Rahman Ruman)।
- মিডিয়া উপ-কমিটি: আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল (Dr. Maudud Hossain Alomgir Pavel), সদস্য সচিব আতিকুর রহমান রুমন।
উল্লেখ্য, বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা একাধিকবার রুহুল কবির রিজভী ও মোর্শেদ হাসান খান-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরেননি কিংবা কোনো মন্তব্য দেননি।