পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলায় ‘অনিয়মের যথেষ্ট প্রমাণ’, গায়ের জোরেই দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল: দুদক চেয়ারম্যান

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ‘যথেষ্ট অনিয়ম ও প্রমাণ’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন (Mohammad Abdul Momen), যিনি বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission)–এর চেয়ারম্যান। তার মতে, এই মামলায় অভিযুক্তদের গায়ের জোরে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন রয়েছে।

মামলার পেছনের প্রেক্ষাপট

২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানা (Banani Police Station)–তে এই মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ। অভিযোগে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টা হয়। মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সেতু বিভাগ (Bridge Division)–এর তৎকালীন সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া (Md. Mosharraf Hossain Bhuiyan)।

অভিযোগের পর তাকে গ্রেপ্তার ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়; পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরেন তিনি। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস, নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল এবং এসএনসি লাভালিন (SNC-Lavalin)–এর প্রেসিডেন্ট।

এছাড়া তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন (Abul Hossain) এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী (Abul Hasan Chowdhury)–এর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।

তবে তৎকালীন দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপপু (Sohabuddin Chuppu) – যিনি বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি – বলেছিলেন, কারো বিরুদ্ধেই দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মামলার নিষ্পত্তি ও নতুন অভিযোগ

দুই বছর তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দাখিল করে দুদক, যেখানে বলা হয় কোনো দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আদালত সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাত আসামিকে অব্যাহতি দেয়।

কিন্তু সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান মোমেন বলেন, “আমাদের নতুন মূল্যায়নে আমরা দেখতে পাই, মামলার উপাদানগুলো সঠিক ছিল, অথচ গায়ের জোরে মামলাটি থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “মূল্যায়ন কমিটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। অপরাধ প্রবণতার কারণেই এমনটা হয়েছে। একই জিনিস একাধিকবার কেনার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা সম্পূর্ণ অনিয়ম।”

মামলার পুনরুজ্জীবন ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

চেয়ারম্যান জানান, মামলাটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে তদন্ত চলছে। “আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হবে,” বলেন মোমেন।

তদন্তের আওতায় প্রথম দফার আসামিদের সঙ্গে নতুন নামও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এমনকি যারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছিলেন, তাদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে।

কমিশনের অনুমোদনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কমিশনের কিছু স্বাধীনতা থাকলেও সেটি যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। আমরা খতিয়ে দেখছি, কোথায় ভ্রান্তি বা ব্যত্যয় ঘটেছে।”

শেষে তিনি বলেন, “আমরা এখন তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। এইবার যেন সত্য উন্মোচিত হয়।”