ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে পলকের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত: জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানকালে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক-এর বক্তব্যকে “মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর” বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ওএইচসিএইচআর। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পলক ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রচার করেছিলেন এবং এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।

ডাটা সেন্টারে আগুন: ভিত্তিহীন দাবি

পলক দাবি করেছিলেন যে, বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় ডাটা সেন্টারে আগুন দেওয়ায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, এই দাবি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর, যা তিনি টেলিযোগাযোগ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

ওএইচসিএইচআরের হাতে থাকা প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন—সবই পলকের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উল্লেখযোগ্যভাবে, যে সব এলাকাকে ‘ডাটা সেন্টার পুড়ে গেছে’ বলে দাবি করা হয়েছিল, সেসব স্থানে সরকারি সংস্থাগুলোর ইন্টারনেট ছিল সচল।

ভুয়া তথ্য ঠেকানোর অজুহাতেও বিপরীত ফল

পলক পরবর্তীতে আরেকবার দাবি করেন, ভুয়া তথ্যের বিস্তার ঠেকাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, বাস্তবে ইন্টারনেট বন্ধের ফলে ভুয়া তথ্য আরও বেশি ছড়িয়েছে এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রকৃত তথ্যের প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দমন অভিযানের সঙ্গে সংযোগ

১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা ধীর করা, অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্লক এবং পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। কোনো পূর্ব ঘোষণা বা আইনি অনুমোদন ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন

বিশেষভাবে ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় ও ৫ আগস্ট সকালে দুইবার সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, যখন সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ এবং দমন অভিযানের নির্দেশ দেয়। জাতিসংঘের মতে, এই পদক্ষেপ ছিল “অবৈধ এবং অনুচিত”

ইন্টারনেট বন্ধের রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা প্রভাব

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইন্টারনেট বন্ধের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সংগঠিত হওয়া ও তথ্য আদান-প্রদান কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে তারা বাধ্য হন সাধারণ ফোনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে, যা ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার (NTMC) ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার জন্য তাদের অবস্থান শনাক্ত এবং কথোপকথনে আড়িপাতা সহজ করে তোলে

জাতিসংঘের সুপারিশ ও নীতিগত দিক

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ কেবলমাত্র জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা জনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো পরিস্থিতিতে এবং চূড়ান্ত বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তা হতে হবে আদালতের অনুমোদন ও পরিষেবা প্রদানকারীদের পূর্ব অবহিত করার মাধ্যমে।

সুতরাং, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম জাতিসংঘের দৃষ্টিতে ছিল অবৈধ, অবিচারমূলক এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী