চাকরির প্রলোভনে রাশিয়ায় পাঠিয়ে যুদ্ধের মরণফাঁদে ফেলছেন দালালরা

চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশি (Bangladeshi) তরুণদের রাশিয়া (Russia) নিয়ে গিয়ে জোর করে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে পাঠানো হচ্ছে ইউক্রেন (Ukraine) যুদ্ধের ময়দানে— এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

ভুক্তভোগী তিন তরুণের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই রাশিয়ায় চাকরির আশায় গিয়েছিলেন কিন্তু পরে দালালদের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে যান রুশ সেনাবাহিনীতে। সামান্য প্রশিক্ষণের পর তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। এদের একজন জানান, “চুক্তিতে সই নেওয়ার পর বুঝতে পারি, আর ফেরার কোনো পথ নেই।”

আকরাম মিয়া: দালালের ফাঁদে প্রাণ হারানো প্রথম বাংলাদেশি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার (Brahmanbaria) আশুগঞ্জের মোহাম্মদ আকরাম মিয়া (২২) দালালের মাধ্যমে রাশিয়ায় যান এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারান। একই প্রতিষ্ঠানে কাজ হারানোর পর আকরামও দালালের ফাঁদে পড়েন।

আফজাল হোসেন মেরাজ: বেতনহীন যুদ্ধের শিকার

ময়মনসিংহ (Mymensingh) জেলার ত্রিশালের (Trishal) আফজাল হোসেন ৮ লাখ টাকা খরচ করে রাশিয়ায় যান ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতে। সেখানে বেতন না পেয়ে দালালের প্রলোভনে পড়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এখন তিনি ইউক্রেনের এক সেনাশিবিরে অবস্থান করছেন এবং গোলাবারুদ বহনের কাজ করছেন।

অয়ন মণ্ডল: দেড় মাসের প্রশিক্ষণে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত

গাজীপুরের (Gazipur) অয়ন মণ্ডলও একই কৌশলে রাশিয়ায় গিয়েছেন এবং বর্তমানে আটকে আছেন সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে। তিনি জানিয়েছেন, “আমরা ফোনে কথা বলতে পারি না। ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়ে কথা বলতে হয়। লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন চালাচ্ছি। খুব বিপদের মধ্যে আছি।”

দালালদের হাত ধরে রাশিয়ায় মৃত্যুর মুখে

তরুণদের দাবি, রাশিয়ায় যাওয়ার আগে তারা জানতেন না তাদের যুদ্ধে পাঠানো হবে। ৩-৫ দিনের মধ্যে হাতেকলমে কিছু প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সামনের লাইনে পাঠানো হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে তারা হামলার শিকার হন, সহযোদ্ধারা নিহত হন বা নিখোঁজ হন। এখন তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করছেন, যেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।

নিহতদের তালিকা বাড়ছে

গত ২৭ মার্চ ময়মনসিংহের গৌরীপুরের (Gouripur) ইয়াসিন মিয়াও রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হন।

সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি আকুতি

এই তরুণরা জানিয়েছেন, তাদের লজ্জা বা ভয়ে কেউ এই সত্য প্রকাশ করতে চায় না। তাই এখনই জরুরি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ। প্রয়োজন যথাযথ কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করে এই নাগরিকদের উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ।