সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও সাড়ে ৩ হাজারের বেশি সাইট বন্ধের পরও থামছে না অনলাইন জুয়া ([Online Gambling])। তরুণ-তরুণীরা প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছেন এই অনিয়ন্ত্রিত আসরে। সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সিকে৪৪৪-এর মাধ্যমে তরুণ সমাজে জুয়ার আসক্তি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
হাইকোর্ট ([High Court]) অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধ ও সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে এবং ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। একই সঙ্গে নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনে ([Cyber Security Act]) অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ([Fayez Ahmad Tayyab])।
তিনি জানান, আইন পাশ হওয়ার পর মোবাইল ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান জুয়া চক্রের আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০০টি জুয়ার সাইট বন্ধ করেছে। সিআইডি ([CID]), ডিবি ([DB]) ও র্যাব ([RAB]) এর যৌথ অভিযানে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু চক্রটি ভিপিএন ব্যবহারে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার আসক্তির কারণে ফুটপাতের চা দোকানি থেকে শুরু করে সিএনজি চালক, নিরাপত্তা প্রহরী, ছাত্র-ছাত্রী, বেকার যুবক সবাই বিপাকে পড়ছে। হাজার টাকায় শুরু করে লাখ টাকারও বেশি হারাচ্ছেন তারা।
টেকনোলজির প্রসার এবং স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ায় অনলাইন জুয়া সহজেই সাধারণ মানুষের মাঝে ঢুকে পড়েছে। গুগল ট্রেন্ডসের তথ্যে দেখা গেছে, সিকে৪৪৪ শব্দটি দিয়ে গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৯৫ হাজার বার সার্চ করা হয়েছে। বিশেষ করে রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে এই প্রবণতা বেশি।
একই সময়ে এএইচআরইএফএস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সিকে৪৪৪ ওয়েবসাইটের একদিনের মধ্যে তিন লাখ ৬৯ হাজারের বেশি ভিজিটর হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টিআইবি ([Transparency International Bangladesh – TIB]) জানিয়েছে, তরুণ সমাজকে রক্ষার জন্য অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। টিআইবির মতে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের দৃশ্যমান কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই।
বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত বলে অনুমান করা হয়। ভারতের প্রতিবেশী বাজারে বছরে অনলাইন বেটিংয়ের আয় প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সচেতনতার মাধ্যমে এই ভয়াবহতা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।