দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন ডা. জুবাইদা রহমান (Dr. Zubaida Rahman), যিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) এর সহধর্মিণী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)র পুত্রবধূ। আগামী মঙ্গলবার লন্ডন (London) থেকে দেশে ফিরছেন তিনি। দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপি (BNP)র নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, তেমনি রাজনীতিতে তার সরাসরি অংশগ্রহণ নিয়ে তৈরি হয়েছে জোরালো কৌতূহল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হলে তা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “তিনি সরাসরি রাজনীতিতে না এলেও তার দেশে উপস্থিতিটাই একটা প্রেরণা, ঐক্যের বার্তা ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি করবে।”
দলীয় নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “জুবাইদা রহমান একজন সম্মানিত পরিবারের সদস্য, যার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিদ্যমান। যদি তিনি রাজনীতিতে আসেন, তবে তা বিএনপির জন্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।” তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের আক্রোশের কারণেই এতদিন তিনি দেশে ফিরতে পারেননি।”
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে চিঠি
জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চার স্তরের নিরাপত্তা চেয়ে এবিএম আব্দুস সাত্তার (ABM Abdus Sattar) স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। তিনি ঢাকায় অবস্থানকালে ধানমন্ডির পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন বলে জানানো হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একজন গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পাহারা এবং আর্চওয়ে স্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আইনি প্রেক্ষাপট
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে কাফরুল থানা (Kafrul Police Station)তে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে মামলা হয় জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দাবি করেছেন, মামলাটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, “রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে ট্রায়াল চালিয়ে সাজা দেওয়া হয়।” ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর মামলার সাজা স্থগিত করা হয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যাবর্তন
২০০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় শিক্ষা ছুটিতে স্বামী ও কন্যাকে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান জুবাইদা রহমান। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছর দেশে ফেরেননি। রাজনৈতিক চক্রান্ত ও মামলার ভয়ে তিনি নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন বলে বিএনপির দাবি। এবার শাশুড়ি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পর দেশে ফেরার সময় তার সঙ্গী হয়ে ফিরছেন।
পারিবারিক ও পেশাগত পটভূমি
সিলেট (Sylhet)জেলায় জন্ম নেওয়া জুবাইদা রহমান প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী (Mahbub Ali)র কন্যা। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে বিসিএসে প্রথম হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
দলীয় প্রস্তুতি
বিএনপি খালেদা জিয়া ও জুবাইদা রহমানকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Hazrat Shahjalal International Airport) থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানাবেন।