মহাপরিচালকবিহীন শিল্পকলা একাডেমিতে কার্যক্রমে স্থবিরতা

দুই মাস ধরে মহাপরিচালক পদ শূন্য থাকলেও শিল্পকলা একাডেমি (Shilpakala Academy) নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। তবে অভিভাবকহীন এই প্রতিষ্ঠানে নীতিনির্ধারণী সভার অভাবে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন একাডেমির বর্তমান পরিষদের সদস্যরা।

নেতৃত্বশূন্যতা ও পরিচালনা সংকট

মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ (Syed Jamil Ahmed) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর থেকে মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন (Mohammad Warech Hossain) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী পরিচালনা পরিষদ থেকেই কর্মপরিকল্পনা তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও এখন কার্যত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তেই সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে।

পরিষদের সদস্য আজাদ আবুল কালাম (Azad Abul Kalam) জানান, “সৈয়দ জামিল আহমেদ থাকাকালে যেসব পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন থেমে আছে।” পরিষদের নিয়মিত সভা হওয়ার কথা তিন মাস পরপর হলেও জুলাইয়ের পটপরিবর্তনের পর নতুন সদস্যদের নিয়ে মাত্র একবার সভা হয়েছে।

অতীতেও ছিল অনিয়ম ও নিষ্ক্রিয়তা

বিগত আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের সময়ে মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী (Liaquat Ali Lucky) নিয়মিত পরিষদের সভা করতেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। শেষ এক বছর কোনো সভা হয়নি, যা আইনবিরুদ্ধ এবং সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিকর।

কর্মসূচির ধারাবাহিকতা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম

নতুন মহাপরিচালকের সময় একাধিক কার্যক্রম সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—ডিসেম্বরে সারা দেশে একযোগে জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব, কাওয়ালি সন্ধ্যা, আদিবাসী অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ, সাপ্তাহিক বাহাস সিরিজ, ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গবেষণা বৃত্তি ঘোষণা।

জানুয়ারিতে ছিল ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’, ৫০ জেলায় নৃত্যানুষ্ঠান, রাজশাহী (Rajshahi)-তে আল্পনাচিত্র প্রদর্শনী, ১৩টি জাতিগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান, দেশব্যাপী অ্যাক্রবেটিক প্রদর্শনী, ষষ্ঠ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী, দেবাশিষ চক্রবর্তীর পোস্টারে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ প্রদর্শনী।

একই মাসে সমুদ্রসৈকত (Sea Beach)-এ সম্প্রীতি সমারোহ, ছয় জেলায় ব্যান্ডসংগীত, ভাববিনিময় সভা, সাধুমেলা, ‘অষ্টাদশ জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪৩১’ আয়োজন করা হয়।

ফেব্রুয়ারিতে ‘বহুভাষিক উৎসব’ হয়—বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্মরণ অনুষ্ঠান, ভাষা ও ঐতিহ্যভিত্তিক ওয়ার্কশপ, শিশু-কিশোরদের ফটোগ্রাফি কর্মশালা, শাস্ত্রীয় সংগীত, পথনাট্য ও লোকনাট্য উৎসব এবং ‘মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্যোৎসব’ আয়োজন করা হয়।

পদত্যাগের পরও শিল্পকলা একাডেমি ঈদের চাঁদরাত, বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবসসহ নানা অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছে। তবে নেতৃত্বশূন্যতার কারণে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।