আন্দোলন দমনে দায়িত্ব পালন করা ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা চেয়েছে তদন্ত সংস্থা

গত জুলাই-আগস্টে সারা দেশে চলা ছাত্র-জনতার সরকার পতনের আন্দোলন দমনে দায়িত্ব পালনকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা চেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (International Crimes Tribunal) তদন্ত সংস্থা (Investigation Agency)। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা মাঠে ছিলেন, তাদের তালিকা পাঠাতে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আন্দোলনের সময়কাল ও প্রেক্ষাপট

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার থেকে শুরু হওয়া এক দফা সরকার পতনের আন্দোলন চলেছিল মাত্র ৩৬ দিন। এতে স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন ৮৭৫ জন এবং আহত হন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।

এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান এবং এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন।

তদন্তে মাঠে নামছে তদন্ত সংস্থা

তদন্ত সংস্থার উপসহকারী পরিচালক আহমেদ নাসির উদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, “সেসব এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেখানে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরা সাক্ষী হিসেবেও বিবেচিত হতে পারেন।”

চিঠিতে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নাম, মোবাইল নম্বর, থানার নাম, সময়, স্থান, ও সহযোগী বাহিনীর (পুলিশ/র‌্যাব/বিজিবি/সেনাবাহিনী) বিবরণ নির্ধারিত ছক অনুযায়ী দিতে হবে।

আইনজ্ঞদের মত

সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির (Mohammad Shishir Monir) এই উদ্যোগকে আইনসিদ্ধ ও সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “কাদের নির্দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। তদন্ত সংস্থা সঠিকভাবেই কাজ করছে।”

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন ও বিচার কার্যক্রম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (Interim Government) আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে। হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার (Golam Mortuza Majumder) কে চেয়ারম্যান করে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ (Shafiul Alam Mahmud) ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী (Mohitul Haque Enam Chowdhury)।

বিচার ত্বরান্বিত করতে সরকার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান

প্রসিকিউশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩৩০টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে। চলমান তদন্ত রয়েছে ৩৯টি এবং প্রাথমিকভাবে মিথ্যা হিসেবে গণ্য হওয়া (মিস কেস) ২২টি। এসব মামলায় মোট ১৪১ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৫৪ জন গ্রেফতার এবং ৮৭ জন পলাতক। এদের মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন পুলিশ সদস্য এবং ৯ জন সামরিক কর্মকর্তা।