জামায়াতকে ছুঁড়ে ফেলার চিন্তা অবাস্তব, তারা রাজনীতিতে মিশে গেছে: ডা. ওয়াজেদ খান

নিউইয়র্কভিত্তিক সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর সম্পাদক ও বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ডা. ওয়াজেদ খান (Dr. Wazed Khan) বলেছেন, “জামায়াত এখন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে গেছে। তাদের একাত্তরের দায়ে বারবার অভিযুক্ত করে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলার চিন্তা অবাস্তব।”

মঙ্গলবার (১৩ মে) দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, সময় এসেছে ৫৪ বছর পর দেশের রাজনীতির কিছু অধ্যায় চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার। অতীতমুখী রাজনীতি আমাদের সামনে এগোতে বাধা দিচ্ছে। ইতিহাস নিয়ে ঘুরপাক না খেয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানো উচিত।

তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) এখন আর ধর্মীয় দল নয় এবং তারা বাংলাদেশে ধর্মীয় শাসন কায়েম করতে পারবে না।” সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাওলানা মওদুদী এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তারা একটি আসনও পায়নি। তবে ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তানের পক্ষ নেয় এবং গণহত্যার পরও দুঃখপ্রকাশ করেনি।

ডা. ওয়াজেদ খান বলেন, “১৯৭১ সালের পর তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী পরিষদে জামায়াতের চারজন মন্ত্রী ছিল, কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।” তিনি বলেন, “৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তারা বাংলাদেশ রাজনীতিতে সক্রিয়। বিএনপি, এরশাদ (Ershad) এবং এমনকি আওয়ামী লীগের (Awami League) সঙ্গেও সময়ভেদে রাজনৈতিক ঐক্য করেছে জামায়াত।”

তিনি বলেন, “২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে জামায়াত দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পায়। এর আগে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতেও একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করেছিল।”

ডা. ওয়াজেদ মনে করেন, জামায়াতের রাজনৈতিক বিকাশে একক কোনো দল দায়ী নয়। তিনি স্বীকার করেন, “বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রশিবিরপন্থী নেতারা সরাসরি ১৯৭১ সালের যুদ্ধপরাধে যুক্ত না থাকলেও তারা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৭৪ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে বাংলাদেশ সরকার নিজেই একটি উদাহরণ স্থাপন করেছিল।”

তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে জামায়াতের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করলেও সংগঠনটিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে পারেনি। জামায়াত এখন বাস্তবতায় রাজনৈতিক পরিসরের অংশ হয়ে উঠেছে।

শেষে ডা. ওয়াজেদ খান বলেন, “যদি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ভুল স্বীকার করে এবং ক্ষমা চায়, তবে অতীত নিয়ে টানাহেঁচড়া না করে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোই হবে বাস্তব পথ।”